‘বেশি সময় লাগেনি, ৮ থেকে ১০ সেকেন্ডে কাজ সেরেছি’

0
23
গ্রেপ্তার মো. আতাউল, ছবি: পুলিশের সৌজন্যে

এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ হিসেবে কলেজছাত্র ওয়াহিদুলের ওপর হামলা করে ‘পাইথন’ গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিহত ওয়াহিদুলও বিংগু গ্রুপ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। ওয়াহিদুলের ওপর হামলাকারীদের সবারই বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে তরুণ ওয়াহিদুল হক ওরফে সাব্বির (১৮) খুন হয়েছেন দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে। চারটি অটোরিকশায় করে এসে ‘পাইথন’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের ২২ জন সদস্য তাঁকে পিটিয়ে আহত করেন। ওয়াহিদুলের পেটে ছুরিকাঘাত করেন কিশোর গ্যাংটির নেতা হিসেবে পরিচিত মো. আতাউল (২২)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওয়াহিদুলের মৃত্যু হয়। ওয়াহিদুল হত্যা মামলার প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

গত ১৬ মে হালিশহরের নয়াবাজার এলাকায় ওয়াহিদুলের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় দিন পর তিনি মারা যান। ওয়াহিদুল হক নগরের মুরাদপুর এলাকার শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে ওয়াহিদুলের পেটে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে দাবি করে আতাউল। তিনি পুলিশকে বলেন, বেশি সময় লাগেনি, ৮-১০ সেকেন্ডে কাজ সেরেছি।

স্বপন কুমার সরকার, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা

হত্যার ঘটনায় ওয়াহিদুলের বাবা মোহাম্মদ এসহাক বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ছুরিকাঘাতে অভিযুক্ত মো. আতাউলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে হালিশহর এলাকা থেকে র‍্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ হিসেবে কলেজছাত্র ওয়াহিদুলের ওপর হামলা করে পাইথন গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিহত ওয়াহিদুলও বিংগু গ্রুপ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। ওয়াহিদুলের ওপর হামলাকারীদের সবারই বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।

হত্যা মামলাটির তদন্ত করছেন হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, আতাউল যে ওয়াহিদুলকে ছুরিকাঘাত করেন, সেটি ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আতাউল নিজেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গত বছরের মার্চে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, চট্টগ্রাম নগরে সক্রিয় প্রায় ২০০ কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জনের মতো। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত। তাঁদের প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৪ ‘বড় ভাই’ থাকার কথা সেই জরিপে উঠে আসে।

স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে ওয়াহিদুলের পেটে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে দাবি করেন আতাউল। তিনি পুলিশকে বলেন, বেশি সময় লাগেনি, ৮-১০ সেকেন্ডে কাজ সেরেছি।’

জানতে চাইলে নিহত ওয়াহিদুলের বাবা মো. এসহাক বলেন, তাঁর ছেলে জুমার নামাজ পড়তে বের হয়েছিলেন। নামাজ শেষে এক বন্ধু তাঁকে নয়াবাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ছুরিকাঘাত ও পিটুনি দেওয়া হয়। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

গত বছরের মার্চে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, চট্টগ্রাম নগরে সক্রিয় প্রায় ২০০ কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জনের মতো। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত। তাঁদের প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৪ ‘বড় ভাই’ থাকার কথা সেই জরিপে উঠে আসে।

জরিপ অনুযায়ী পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ। এসব ছাত্র পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক নেওয়া ও কেনাবেচা এবং অনলাইন জুয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নেয় স্কুলের সময়টা।

গাজী ফিরোজ

চট্টগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.