বেশি কমবে অকটেন ও পেট্রলের দাম

0
113
জ্বালানি তেল

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। প্রতি মাসেই নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। শিগগিরই চলতি মার্চের জন্য নির্ধারিত দামের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এতে ডিজেলের দাম কমতে পারে প্রতি লিটারে ৪ টাকা। তবে অকটেন ও পেট্রলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা কমানো হতে পারে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, বর্তমানে ডিজেল বিক্রি করে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। তবু কিছুটা ছাড় দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

মূল্য নির্ধারণের নতুন সূত্র অনুসারে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা হতে পারে, যা বর্তমানে ১০৯ টাকা। ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হবে।

অকটেনের নতুন দাম হতে পারে লিটারপ্রতি ১১৫ টাকা, যা এখন ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পেট্রল বিক্রি করা হতে পারে লিটারপ্রতি ১১১ টাকায়। এখনকার দর ১২৫ টাকা।

মূল্য নির্ধারণের নতুন সূত্র অনুসারে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা হতে পারে, যা বর্তমানে ১০৯ টাকা। ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হবে।

অবশ্য বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে কার্যত যদি ডিজেলের দাম না-ও কমে, তবু কমবে অকটেন ও পেট্রলের দাম। কারণ, জ্বালানি বিভাগ নতুন মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়ায় ঠিক করেছে যে ডিজেলের চেয়ে অকটেনের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বেশি থাকবে। আর অকটেনের চেয়ে ৪ টাকা কম হবে পেট্রলের দাম। ফলে ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও অকটেনের দাম লিটারে ১১ টাকা ও পেট্রলের দাম ১০ টাকা কমার কথা।

জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হয়ে এলে নতুন দামের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু হচ্ছে এ মাস থেকে। এতে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময়ই মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল বিক্রি করে মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু হচ্ছে এ মাস থেকে। এতে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।

ভর্তুকি সমন্বয়ের কথা বলে দাম বাড়ানোর পর গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিপিসির মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সরকারকে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে সংস্থাটি। অথচ মূল্য সমন্বয় করা হয়নি।

স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালুর কথা ছিল গত সেপ্টেম্বরে। ছয় মাস পর এটি এখন চালু করা হচ্ছে। খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও আগেই দাম কমানোর সুযোগ ছিল।

ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষ দিকে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয় দাম।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাস দ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।

জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষ দিকে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয় দাম।

সর্বশেষ মূল্য নির্ধারণের সময় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি (১৫৮ দশমিক ৯৯ লিটার) গড়ে ১৩৯ মার্কিন ডলার ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এরপর গত বছর দাম কমে ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে। তবে বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার। এবার মার্চের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববাজার মূল্যের গড় ধরে হিসাব করা হয়েছে।

নিয়মিত মূল্য সমন্বয় চালুর মধ্য দিয়ে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি থেকে সরকার স্থায়ীভাবে বের হয়ে গেল। এতে অতিরিক্ত যাতে মুনাফা না হয়, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। মূল্য নির্ধারণের সূত্রটা জটিল। তাই কয়েক দফা মূল্য নির্ধারণের হিসাবটি প্রকাশ করা হলে এতে মানুষের আস্থা বাড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম

ডিজেলের দাম কমলে বাস ও ট্রাক মালিকদের খরচ কমবে। সেচের ব্যয়ও কমবে। অকটেন ও পেট্রলের দাম কমলে ব্যয় কমবে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের। যদি বাস ও ট্রাকভাড়া না কমে তাহলে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে না। পণ্যের পরিবহন ব্যয়ও কমবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, নিয়মিত মূল্য সমন্বয় চালুর মধ্য দিয়ে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি থেকে সরকার স্থায়ীভাবে বের হয়ে গেল। এতে অতিরিক্ত যাতে মুনাফা না হয়, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। মূল্য নির্ধারণের সূত্রটা জটিল। তাই কয়েক দফা মূল্য নির্ধারণের হিসাবটি প্রকাশ করা হলে এতে মানুষের আস্থা বাড়বে। তিনি বলেন, ডিজেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে যদি পরিবহন ভাড়া সমন্বয় না করা হয়, তাহলে এর সুফল আসবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.