পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা আরও আটটি ফ্ল্যাট এবং ২৫ একর (১ একর=৬০.৫ কাঠা) ২৭ কাঠা জমি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ফ্ল্যাটগুলো ঢাকার বাড্ডা ও আদাবরে এবং জমি নারায়ণগঞ্জ, বান্দরবান ও উত্তরায়।
একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেসরকারি সিটিজেন টেলিভিশন ও টাইগার ক্রাফট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শেয়ার অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ বুধবার এই আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
এর আগে দুই দফায় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এ ছাড়া ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে দুদক। তৃতীয় দফায় বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বাড্ডা ও আদাবরে আটটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৪ কাঠা জমি, বান্দরবানে ২৫ একর জমি ও উত্তরায় তিন কাঠা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে সিটিজেন টেলিভিশন ও টাইগার ক্রাফট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি–অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
উল্লেখ্য, বেনজীরের পরিবারের সদস্যদের গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ৬ জুন দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে তাঁদের যেসব কৃষিজমি রয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা দুটির কৃষি কর্মকর্তাদের। একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদের পরিবারের মৎস্য ও প্রাণীর খামার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাকে।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দুই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে কক্সবাজারের জমি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে। বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এসব সম্পদ থেকে যে আয় হবে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।