ব্যক্তির প্রভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত নয়

0
142
টাকা

যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা খাটাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো। টাকা ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা বা সুশাসনের বিষয়টি না দেখেই অর্থ রাখা হচ্ছে। একটি পর্যায়ে আর টাকা ফেরত না পেয়ে বারবার আমানতের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। তাই এখন থেকে সব ধরনের নিয়ম মেনে ব্যাংকের বিনিয়োগ কমিটির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখতে হবে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে এমন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ব্যাংকবহির্ভূত নতুন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিলের ওপর ভর করে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪৫ কোটি এবং সোনালী ব্যাংক থেকে ৯৯ কোটি টাকা নিয়েছেন। আদৌ ওই অর্থ ফেরত আসবে কিনা তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অন্য একটি সরকারি সংস্থার তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে নানা অসংগতি পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ডের (বিআইএফএফএল) এমডিকে চিঠি দিয়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, কিছু রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, সার্বিক সুশাসন বিবেচনায় নেওয়া এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এরপর বিনিয়োগ কমিটির মাধ্যমে কাউন্টার পার্টি এক্সপোজার লিমিট বা একক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বা পুনঃবিনিয়োগ কমিটি না থাকলে নতুন গঠন করে কাউন্টার পার্টি এক্সপোজার নির্ধারণ করতে হবে।

ব্যাংকাররা জানান, বেশ আগ থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের খারাপ অবস্থা ছিল। গ্লোবাল ব্যাংক ও আভীভা ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ২০১৪ সালে পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স দখলে নেন। এসব প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময় মতো আমানত ফেরত না দেওয়ার প্রচুর অভিযোগ পেতে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত না দেওয়ার প্রভাবে পুরো খাত চাপে রয়েছে। সাধারণ আমানতকারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান আগের মতো এসব প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখছে না। আবার নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণও সময়মতো ফেরত আসছে না। যে কারণে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালন ব্যয় মেটানোর মতো অর্থ নেই। এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংকে ধরনা দিয়ে পাত্তা পাচ্ছে না। যে কারণে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক সূচকের উন্নতি এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান যেন এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেননা অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কিংবা প্রভাব খাটিয়ে আমানত নিচ্ছে। এটি বন্ধের জন্য নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১৩ মার্চ আমানত নিতে অনৈতিক খরচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সার্কুলার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিশন, উন্নয়ন ব্যয় বা ব্যবসা উন্নয়ন খরচ যে নামেই হোক আমানতের জন্য কোনো খরচ না করতে বলা হয়। এর আগে আমানত পেতে উচ্চ সুদের টোপ দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এসএমএস না দেয় সে বিষয়ে সতর্ক করে সার্কুলার দেওয়া হয়। সাধারণত ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার বেশি থাকে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ এবং ঋণে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদহারের সীমা দেওয়া হয়। অবশ্য শিগগিরই সুদহারের এ সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.