অনন্ত জলিলের মুখে ‘হোয়াই, কেন’ শুনে হাসি আটকাতে পারেননি দর্শক

0
95
সিনেমায় একজন শীর্ষ মাদক কারবারির চরিত্রে মিশা সওদাগর ও এক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত জলিল

গল্পটা চেনা, গল্পের গতিবিধিও অনেকটাই অনুমেয়; কচ্ছপ আর খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতার সেই চর্চিত গল্পের মতো। তবে উপস্থাপনাটা ঝলমলে, জাঁকালো। পপকর্ন চিবাতে চিবাতে একবসায় সিনেমাটি দেখে ফেলা যায়।
সিনেমায় প্রিন্স মাহমুদ নামের এক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা অনন্ত জলিল। ঢাকার শীর্ষ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের গল্প নিয়েই কিল হিম। শুরুটা শ্লথ হলেও ৪০ মিনিট পর গতি পেয়েছে, এরপর শেষ দৃশ্য পর্যন্ত তরতর করে এগিয়ে গেছে।

মসলাদার সিনেমার সব বন্দোবস্তই এতে রয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো গোছানো ও বাস্তবসম্মত। আড়াই ঘণ্টাজুড়ে হৃদয়গ্রাহী ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক একের পর এক দৃশ্যকে জীবন্ত করে তুলেছে।

সিনেমার পোস্টার
সিনেমার পোস্টারছবি: ফেসবুক

চিত্রনাট্যের পরতে পরতে অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। কিছু ফাঁকফোকর বাদ দিলে অ্যাকশনে যথেষ্ট মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন ফাইট ডিরেক্টর চুন্নু। বলা যায়, অ্যাকশনেই মোটামুটি উৎরে গেছে সিনেমাটি। আর কাজী সেলিমের শ্রুতিমধুর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মাদকতা ছড়িয়েছে।
সিনেমায় চিত্রগ্রাহক সাইফুল শাহীনের ক্যামেরার কাজ চোখে আরাম দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন লোকেশন, ড্রোন শটের পরিমিত ব্যবহার আর প্রয়োজনীয় ক্লোজ শট সিনেমার পরিবেশনাকে ঝকমকে করে তুলেছে। সিনেমায় দুটি গান রয়েছে। এর মধ্যে আইটেম গানটি পর্দায় খুব একটা তরঙ্গ ছড়াতে না পারলেও রোমান্টিক গানটির কথা ও সুরের সঙ্গে লোকেশন আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। সিনেমায় কমেডিও রয়েছে, তবে বেশ পরিমিত।

সিনেমাজুড়ে প্রযুক্তির যথাসাধ্য ব্যবহার করেছেন পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহেভেরিয়াল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভাইয়ের খুনের বদলা নিতে দেশে ফেরেন জিনিয়া (বর্ষা)।

সিনেমার দৃশ্যধারণে অনন্ত জলিল ও রুবেল
সিনেমার দৃশ্যধারণে অনন্ত জলিল ও রুবেলছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

জিনিয়ার অত্যাধুনিক ল্যাবে চৌকস পুলিশ প্রিন্স মাহমুদকে ধরে আনা হয়; এরপর তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলে শরীরে একটি মাইক্রোচিপ বসানো হয়। হাতে যোগ করা হয় জিপিএস ট্র্যাকার, অতীত ভুলে নতুন পরিচয় পায় প্রিন্স মাহমুদ। তার নাম হয় সালমান চৌধুরী। জিনিয়া ও তার দলের কাছে থাকে সালমান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণ।

এর আগে ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের প্রিন্স সিনেমায় স্মৃতি মুছে ফেলার এমন ধারণা পাওয়া যায়। তবে এটাকে পুরোপুরি কপি না বলে অ্যাডাপটেশন বলা যায়। যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দৃশ্যগুলো তুলে আনা হয়েছে।
এবার অভিনয়ে আসা যাক। প্রায় পুরোটা সময় পর্দা অনন্ত জলিলের দখলে ছিল। সংলাপ প্রক্ষেপণ, উচ্চারণ, মুখভঙ্গি বিবেচনায় আগের সিনেমাগুলোর তুলনায় অনন্ত জলিলের অভিনয় বেশ পরিণত হয়েছে। কিছু দৃশ্য বাদ দিলে মোটামুটি সাবলীল অভিনয় করেছেন তিনি। চুলের স্টাইল, রোদচশমা আর পরিমিত পোশাকে অনন্ত জলিলকে ছিমছাম লেগেছে। জিনিয়া চরিত্রে বর্ষাও সাবলীল ছিলেন। ফাহাদ নামে এক শীর্ষ মাদক কারবারির চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, তবে তাঁকে বাকি দশটা সিনেমা থেকে আলাদা করা যায়নি। টাইগার নামে এক কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক রুবেল। এই চরিত্র দিয়ে প্রায় হারিয়ে যাওয়া রুবেলের পুনর্জন্ম হতে পারত, তবে নিজেকে তিনি যথেষ্ট ভাঙতে পারেননি।

তবে সিনেমার গল্পটা আরেকটু আঁটসাঁট হতে পারত, মেদ ছিল। দুয়েকবার বেশ ঝুলে গেছে। শুরুটা বেশ শ্লথ ছিল, কিছু দৃশ্য কমিয়ে ফেললেও চলত। মিশা সওদাগরের চার চ্যালার শত্রুদের মেরে ফেলার দৃশ্যগুলো গল্পের সঙ্গে খুব একটা প্রাসঙ্গিক ছিল না। সিনেমার চিত্রগ্রহণ মোটের ওপর বেশ ভালো হলেও তিন থেকে চারটি দৃশ্যে সংলাপ বলার সময় চরিত্রের ঘাড়ের ওপর থেকে বাদ পড়েছে। এটা কি  ইচ্ছাকৃত নাকি অমনোযোগ!

অনন্ত জলিল উচ্চারণে অনেকটা উন্নতি করলেও পুরোটা এখনো পারেননি। একই কথা বাংলার পর ইংরেজিতে বলার নিজস্ব স্টাইল ধরে রেখেছেন। সিনেমার শেষ ভাগে খুব সিরিয়াস দৃশ্যে অনন্ত জলিলের মুখে ‘হোয়াই, কেন’ শুনে হাসি আটকাতে পারেননি দর্শক। দুয়েকবার অনন্ত জলিলের হাসির অভিনয়ও মেকি লেগেছে।
মোটের ওপর সিনেমাটি ক্লিশে লাগবে না, সিনেমাটি পরিবার নিয়ে দেখতে পারেন। আড়াই ঘণ্টা বৃথা যাবে না, ছোটখাটো অসঙ্গতিগুলো বাদ দিলে অনেকটা নির্ভেজাল বিনোদন নিয়ে হল থেকে ফিরতে পারবেন।

প্রায় পুরোটা সময় পর্দা অনন্ত জলিলের দখলে ছিল
প্রায় পুরোটা সময় পর্দা অনন্ত জলিলের দখলে ছিল

সুনান মুভিজের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ঈদুল ফিতরে। সিনেমার শেষ ভাগে বলা হয়েছে, টু বি কন্টিনিউড (চলবে)। সিনেমার দ্বিতীয় খণ্ড আসবে কি না, তা এখনো খোলাসা করা হয়নি। তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.