চলছে বিশ্বকাপের ক্ষণগণনা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা ও হিসাব–নিকাশ। কে তারকা হতে পারেন কিংবা কারা ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
তবে এর মাঝে এমন কিছু ক্রিকেটার বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন, যাঁদের বয়স অন্যদের তুলনায় বেশ কম, ২০-এর আশপাশে।। তবে বয়স কম হলেও তাঁদেরও সামর্থ্য আছে দারুণ কিছু করার। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সর্বকনিষ্ঠ পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন বাংলাদেশের তানজিম হাসান সাকিব। এ তালিকায় সবার ওপরে আছেন নুর আহমাদ। আফগান এ স্পিনারের বয়স মাত্র ১৮ বছর ২৭০ দিন। এ তালিকায় অন্যদের মধ্যে আছেন নেদারল্যান্ডসের আরিয়ান দত্ত ও বিক্রমজিৎ সিং এবং আফগানিস্তানের রিয়াজ হাসান।
নুর আহমেদ (১৮ বছর ২৭০ দিন)
বিশ্বকাপে যেসব উদীয়মান খেলোয়াড়ের ওপর চোখ থাকবে, নুর আহমেদ তাঁদের অন্যতম। যিনি এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটারও বটে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ঘূর্ণি–জাদুতে চমক দেখিয়েছেন এই বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার। চায়নাম্যান এই স্পিনার সবার নজরে আসেন ২০২৩ আইপিএলের রানার্সআপ গুজরাট টাইটানসের হয়ে খেলে। ফ্রাঞ্চাইজিটির হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৬ উইকেট।
এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লিগে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। আফগানিস্তানের হয়ে অবশ্য এখন পর্যন্ত ৩টি ওয়ানডে খেলে নুর নিয়েছেন মাত্র ২ উইকেট। তবে টি–টোয়েন্টিতে যে একটি ম্যাচ খেলেছেন, সেই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন এ স্পিনার। বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে নুর নিজেকে মেলে ধরতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
আরিয়ান দত্ত (২০ বছর ১৪১ দিন)
বয়স মাত্র ২০ বছর ১৪১ দিন। এর মধ্যেই নেদারল্যান্ডসের হয়ে ২৫টি ওয়ানডে ও ৫টি টি–টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন আরিয়ান দত্ত। বল হাতে ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট সংখ্যা ২০। সেরা বোলিং ৩১ রানে ৩ উইকেট। বোলার হিসেবে তাঁর মাঝে দারুণ সম্ভাবনা দেখেছেন সাবেক ডাচ কোচ রায়ান ক্যাম্পবেলও। ২০২২ সালের জুনে টানা তিন ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে আউট করে আলোচনায় আসেন আরিয়ান। তিন ম্যাচের দুটিতে করেন বোল্ড। এখন বিশ্বকাপে তেমন কোনো চমক নিয়ে আরিয়ান হাজির হন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
বিক্রমজিৎ সিং (২০ বছর ২৬৪ দিন)
জন্মভূমিতে ডাচদের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন বিক্রমজিৎ সিং। ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম পাঞ্জাবের চিমা কুর্দে। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসেই স্থায়ী হন বিক্রমজিৎ। মাত্র ৭ বছর বয়সে ইউরোপের দেশটিতে পাড়ি জমান এই অলরাউন্ডার। ওপেনিং ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতি মিডিয়াম পেসেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সমার্থ্য আছেন তাঁর। গত বছর ডাচদের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৫ ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতে ৩২.৩২ গড়ে করেছেন ৮০৮ রান। যেখানে ১টি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৪টি ফিফটিও। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৭ উইকেট। এখন বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে এই ওপেনার আলো ছড়াতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
রিয়াজ হাসান (২০ বছর ৩২৭ দিন)
গত বছরের জানুয়ারিতে সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে আফগানিস্তান দলে অভিষেক হয় রিয়াজ হাসানের। এবার নামছেন বিশ্বকাপেও। রিয়াজের বয়স এখন ২০ বছর ৩২৭ দিন। অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৫ ওয়ানডে। ৩০ গড়ে করেছেন ১২০ রান, আছে ১টি ফিফটি। এখনো বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে দারুণ কিছু করার সামর্থ্য আছে এই আফগান ব্যাটসম্যানের। কে জানে হয়তো বিশ্বকাপই হতে পারে রিয়াজের জ্বলে ওঠার মঞ্চ।
তানজিম হাসান সাকিব (২০ বছর ৩৪৫ দিন)
অভিষেকেই বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশি পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। এরপর বোল্ড করেন তিলক ভার্মাকেও। সেই ম্যাচে বল হাতে বাংলাদেশের জয়ের ভিতও গড়ে দেন উদীয়মান এ পেসার।
বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে রেখেই দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচকেরা। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ৫ ক্রিকেটারের মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছেন সাকিব। বিশ্বকাপে মাঠে নামার সুযোগ পেলে নিজের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ আছে তাঁর। তাঁর মাঝে দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকেরাও। স্লোয়ার, সুইং ও ইয়ার্কারেও ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে পারেন এ বোলার। এ ছাড়া বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারেও অবদান রাখার সামর্থ্য আছে তানজিমের।