বিশেষজ্ঞরা চান জরুরি অবস্থা, মন্ত্রণালয়ের না

0
171

ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘জরুরি অবস্থা’ জারির প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এখনই এ পরামর্শ মানতে নারাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করবে।

এদিকে ডেঙ্গুতে প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এ সময় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ের ১৬ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। জুলাইয়ের এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৯০০ জন। সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৮৮১। গতকাল পর্যন্ত হিসাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪ হাজার ২২০ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৫৩ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন ২ হাজার ৭৭৫ জন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংকট দেখা দিতে পারে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ
মনে করেন, ডেঙ্গু রোগতান্ত্রিকভাবে মহামারি রূপ নিয়েছে। এ জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি বাড়তি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

 

এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো বিরতি ছিল না। অপরিকল্পিত ত্বরিত নগরায়ণ, জনঘনত্ব, গ্রাম ও শহরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গুকে এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এবার ডেঙ্গুর চারটি ধরনের সব ক’টিতেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এখন জনস্বাস্থ্যে জরুরি পরিস্থিতি চলছে, যা উদ্বেগের কারণ।

সেমিনারে দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিউমাটোলজিস্ট অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক। ডেঙ্গুর বিভিন্ন উপসর্গ বর্ণনা করার পাশাপাশি তিনি বলেন, চিকিৎসকদের উচিত ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিধি বা প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া। এর পরপরই গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অলনাইনে এক সংবাদ সম্মলেন করে। এতে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ডেঙ্গুর এখন যে পরিস্থিতি, সেটি জরুরি অবস্থা জারি করার মতো নয়। ২০০০ সাল থেকে আমরা ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনা করে আসছি। এটি আমাদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। এর চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়েও আমাদের সবার জানা।

বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা খরচ কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য সচিব। বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে, সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দল পাঠিয়ে তদারকি করার নির্দেশনা দেন সচিব। এ ছাড়া সব বেসরকারি হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার সময় এখনও আসেনি। তবে করোনার সময় আমরা পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি করেছি। এবারও সেটি হতে পারে। এটি নীতিনির্ধারকদের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের অন্য হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি ছিল; কিন্তু সেগুলো ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে। দেশে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু বাড়ছে। আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আমরাও সংকটে পড়ে যাব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনা জটিল নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাবছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখে। তবে অপ্রয়োজনীয় রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তর না করার অনুরোধ করেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.