প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একই অবস্থানে পড়ে আছে। এ কারণে সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না। বিনিয়োগ না হলে শিল্প উৎপাদন বাড়ে না। সরকারও বাড়তি রাজস্ব পায় না। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কেন বাড়ছে না তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা দরকার। বিনিয়োগ সহায়ক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে কিনা বোঝা দরকার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলন ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক-২০২৩’ এর সমাপনী অধিবেশনে বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দু’দিনের এ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
ড. মসিউর রহমান বলেন, ভোগভিত্তিক দারিদ্র্য এখনও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কারণেই যা সম্ভব হয়েছে। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয় ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখার বিষয় রয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসন্ন বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাজেট। করোনা থেকে পুরোপুরি উত্তরণেরও উদ্যোগ থাকবে এবারের বাজেটে। মূল্যস্ফীতি এখন কিছুটা কমে এসেছে। তবে তা আগের জায়গায় ফিরে যেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যেতে পারে।
বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে ড. শামসুল আলম বলেন, এ নিয়ে অতি আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। যতটা বলা হচ্ছে তার চেয়ে দৃশ্যমান বৈষম্য কম। এ নিয়ে ভীত হওয়ার মত কিছু নেই। যারা বেশি বিনিয়োগ করবেন তাদের আয় বেশি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারো আয় বাড়লে সেখান থেকে কর বাড়িয়ে সম্পদ বণ্টনের পরিকল্পনা আছে সরকারের।
আলোচনায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রার বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ তুলে আনেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এককভাবে এসব বিষয় মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। রাজস্বনীতি এবং মুদ্রানীতির ভূমিকা আছে এখানে।
বিনিময় হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব ধরনের হার পর্যালোচনা করে বর্তমান বিনিময় হার নির্ধারিত হচ্ছে।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, রিজার্ভ বড় রেখে টাকার মূল্য ধরে রাখার সুযোগ নেই। রিজার্ভ এখন কত তা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হওয়া উচিত নয় বরং প্রতিদিন কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে সেটাই বিবেচনার বিষয়।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা একসময় নামমাত্র সুদে বিদেশি উৎস থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ঋণ নিয়েছেন। সম্প্রতি ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করছেন। এরকম কিছু কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব থেকেই ডলার এখন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে গভর্নর বলেন, হুন্ডির সঙ্গে সরকার কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ তাদের কালো টাকা আছে। বেশি ব্যয় করতে তাদের সমস্যা নেই। এ কারণে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিলেও ২ বিলিয়ন ডলারের মতো এখনও হুন্ডিতে আসে।
এই অংক মাসে নাকি বছরের তা গভর্নর অবশ্য উল্লেখ করেননি। তবে বাংলাদেশে মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স আসে এবং সমপরিমাণ বা তারও বেশি হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠান বলে ধারণা করা হয়।
গভর্নর আরও বলেন, হুন্ডি ঠেকাতে সরকার ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ করার চেষ্টা করছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছরেরর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, আন্ডার ইনভয়েসিং অন্তত ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কঠোর নজরদারির ফলে এ সুবিধা পাওয়া গেছে। বিলাসী পণ্যের চাহিদা সীমিত রাখা এবং নিয়ন্ত্রণের ফলে আমদানি নির্ভরতা কমেছে। এতে নিজস্ব উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এর ফলে রোজায় ৩ বিলিয়ন ডলারের আমদানি কম করা সম্ভব হয়েছে।
অধিবেশনে প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়া, আব্দুল বাকি প্রমুখ।
বিআইডিএসের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল উন্নয়ন সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ। সম্মেলেনের দুই দিনে মোট ২২টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। শিক্ষাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নেন।