পানি বাড়ার সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন, ঈদের আগে বন্যার আশঙ্কায় মানুষ

0
104
উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর এলাকায়

উজানের ঢলে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখনো বাড়িঘরে পানি ওঠেনি। তবে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে গেছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। ফলে ঈদের আগে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীর তীরের মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য শেষ ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি বেড়েছে ও কমেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরের নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠেছে। আজ সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েক বিঘা জমির পাট ও নেপিয়ার জাতের ঘাসের জমি ভেঙে গেছে।

গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি আরও বেড়েছে

আজ সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি ও রতনপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্রোত বইছে। স্রোতে কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে। নদের পানি উপচে না পড়লেও প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। তীরে দাঁড়িয়ে মানুষ পানি দেখছেন। সিসি ব্লক দেওয়ায় বালাসিতে ভাঙেনি। তবে স্রোতের কারণে রতনপুর গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। এ গ্রামের যেসব স্থানে জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বালাসি ও রতনপুর এলাকার অন্তত ২৫ জন বন্যা নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন।

পানির চাপে ভাঙতে শুরু করে তীর। আজ শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর এলাকায়
পানির চাপে ভাঙতে শুরু করে তীর। আজ শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর এলাকায়

ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বালাসি গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর মিয়া (৫০)। তিনি নিজের ভাষায় বলেন, ‘পানি বারব্যার নাগচে। গেলোব্যার এ সমায় বান (বন্যা) হচিলো। তাই এব্যারক্যা ঈদের আগোত বান হয় নাকি, তাক নিয়া হামরা চিনতাত আচি। ঈদের আগে বান হলে তো হামারঘরে আনোনদো মাটি হয়া যাবে।’

একই গ্রামের কৃষক মেহেদী মিয়া (৫৫) বলেন, ‘নদীত পানি বাড়লে হামারঘরে (আমাদের) এলাকাত বান হয়। একনও নদী ভরে নাই। ভরলে বান হবে। বান আলে হামরা উচে জাগাত যামো।’

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসে ছিলেন রতনপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম (৬০)। তিনি বলেন, ‘নদীর পানির চাপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাঁর ১৫ শতক জমি ভেঙেছে। এই ভাঙন চলতে থাকলে বাড়িঘর চলে যাবে, এই ভয়ে আছেন। ভাঙন বন্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি বেড়ে ডুবছে ১৬৫টি চরের নিম্নাঞ্চল

যেসব জায়গায় জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলা হয়েছিল সেসব জায়গা ভাঙেনি বলে জানালেন গ্রামের আরেক কৃষক আমিনুল হক (৫৫)। তিনি আরও বলেন, ‘যে জাগাত বালুর বস্তা দ্যায় নাই, সেই জাগাত ভাংব্যার নাগচে। একুনি ববোসতা না নিলে গোটাল গেরাম ভাঙি যাবি।’

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক আজ সকালে বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কোনো নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ভাঙন রোধে কিছু এলাকায় নদীর তীরে জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। বাকি অংশেও ফেলা হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.