জুলাই মাসে শেয়ারবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার। জুলাই শেষে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমে নেমেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ২৫টিতে। এ সংখ্যা গত প্রায় ১৪ বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। অবশ্য আগস্টের প্রথম তিন কার্যদিবসে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৬৯৯টি। ফলে বৃহস্পতিবার শেষে কিছুটা বেড়ে এ সংখ্যা ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪টিতে উন্নীত হয়েছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের নভেম্বরের পর এ বছরই বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১৭ লাখে নেমেছে। ২০০০ সালে সিডিবিএলের কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৭৮ লাখ ৮৯ হাজার ৬১৩টি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যার সিংহভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। এ দফায় নতুন খোলার তুলনায় বেশি সংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার ঘটনা শুরু হয় গত ১৩ জুন থেকে। ওই দিন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিট ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৮টি বিও অ্যাকাউন্ট কমে যায়।
নির্দিষ্ট মাসে বিও অ্যাকাউন্ট কমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। সাধারণত প্রতি বছর জুন থেকে জুলাই মাসে নবায়ন না করায় বিপুল সংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়। জুলাই মাসেই বন্ধ হয় সবচেয়ে বেশি। ২০১০ সালে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এক প্রজ্ঞাপনে বছরে ৫০০ টাকা দিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের প্রথা চালু করে। এর পর থেকে প্রতি বছরই এমন হচ্ছে।
নিয়ম হচ্ছে, কোনো বিও অ্যাকাউন্টহোল্ডার নবায়ন ফি না দিলে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট বা ডিপি শেয়ারশূন্য অবস্থায় ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে শেয়ার থাকলে নবায়ন ফি না দিলেও ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যায় না। নবায়ন ফি প্রদান না করা পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার ক্ষমতাও ডিপিকে দেওয়া আছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ বছর জুলাই মাসে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলেও গত বছর ২ লাখ সাড়ে ১৯ হাজার অ্যাকাউন্ট শেয়ারশূন্য বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন ফি না দেওয়ার কারণে বন্ধ হয়েছিল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার, যা ছিল এক মাসে সর্বোচ্চ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধের রেকর্ড। এর আগের পাঁচ বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নিট হিসাবে বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ না হয়ে খোলা হয়েছিল বেশি। ওই মাসে নিট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৯টি বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছিল। এর বাইরে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০ সালের জুলাই মাসে যথাক্রমে নিট ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৪, ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৭৯, ১ লাখ ৫১ হাজার ৯১০ এবং ২৬ হাজার ৮১৯টি বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবারের হিসাবে মোট ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪টি বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে একক অ্যাকাউন্ট ছিল ১২ লাখ ১৮ হাজার ২৫২টি এবং যৌথ অ্যাকাউন্ট ছিল ৫ লাখ ৯ হাজার ১০৪টি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৮৯৯টি ছিল পুরুষ বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট, যা গত বছরের তুলনায় পৌনে ৫ শতাংশ কম। ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৫৭টি ছিল নারী বিনিয়োগকারীর বিও অ্যাকাউন্ট, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম।
অন্য এক হিসাবে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও অ্যাকাউন্ট কমার হার সবচেয়ে বেশি, যা ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার শেষে বিদেশি ও প্রবাসীদের অ্যাকাউন্ট ছিল ৫৫ হাজার ৪৭৩টি। ঠিক এক বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজার ২৬৩টি।
জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার একটি অচল বাজার। ফ্লোর প্রাইসের কারণে অর্ধেকের বেশি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে না। বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দরেও ক্রেতা নেই। সবাই যদি শেয়ার বিক্রি করতে পারত, তাহলে আরও অনেক বিও অ্যাকাউন্ট কমত।