বিএসইসির চেয়ারম্যানের অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে দুদক

0
350
এম খায়রুল হোসেন

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ‘অতীব গোপনে’ খায়রুল হোসেনের ‘অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের’ ঘটনা অনুসন্ধানে দুদকের একজন সহকারী পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার দিনভর চেষ্টা করেও দুদকের দায়িত্বশীল কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় এ বিষয়ে দুদক অতিগোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ৭ আগস্ট সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পদে থাকা অবস্থায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানের উদ্যোগ এটাই প্রথম। এর আগে দুদক বিএসইসির কোনো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে অনুসন্ধান করেনি। তাই শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এ ধরনের পদে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর ওই ব্যক্তির পদে থাকা নৈতিকভাবে অনুচিত। কারণ, তাতে অনুসন্ধান কার্যক্রম প্রভাবিত ও ব্যাহত হতে পারে।

জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তিনি অপরাধী প্রমাণিত হয়ে যান না। তবে যেহেতু বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান শুরু হওয়ায় দুটি কারণে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। প্রথমত, ওই পদে থাকার নৈতিক অবস্থান তাঁর আর নেই। দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁর পদত্যাগ জরুরি। নয়তো অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁর পদত্যাগের পর যদি অপরাধ পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে তাঁকে পুনর্বহাল করা যেতে পারে।

খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর যোগসাজশে দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়ে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার’। দুদকের পরিচালক (মানিলন্ডারিং) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তাঁকে ‘অতিদ্রুত গোপনীয়ভাবে’ অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর ২০১১ সালে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৫ মে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হোসেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন-১৯৯৩-এ কমিশনের গঠন–সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণ তাঁহাদের নিয়োগের তারিখ হইতে চার বৎসর স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন এবং অনুরূপ একটি মাত্র মেয়াদের জন্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য হবেন।’ কিন্তু খায়রুল হোসেন তিন মেয়াদে নিয়োগ পান।

বিএসইসির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বড় অভিযোগ, দুর্বল ও মানহীন কোম্পানি বাজারে আনা। দুদকের কাছে বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে সেখানেও বলা হয়েছে দুর্বল কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির সুযোগ করে দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ৮৪টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর বাইরে এ সময়ে বেশ কিছু মিউচুয়াল ফান্ডও তালিকাভুক্ত হয়েছে। যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই দুর্বল মানের। এ কারণে কয়েক বছর না যেতেই বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও শেয়ারবাজারে সেসব বন্ধ কোম্পানির লেনদেন চলছে। এ ছাড়া ৯টি কোম্পানি অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.