মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার সুযোগ আছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আসন সমঝোতার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। তবে কারও সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এনসিপির আসন সমঝোতা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আর কোনো সুযোগ আছে কি না, এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কারণ, এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতার সম্ভাব্য নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনাও চলবে।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতার সম্ভাব্য নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, হাতিরঝিল থানা (একাংশ) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
এ ছাড়া এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা–১৮, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতার নির্বাচনী আসনে প্রথমে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তখন ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী দেয়নি দলটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দফায় যে ৩৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি, সেখানে ওই দুটি আসনও রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে এখনো মনে করেন, সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত অনেক কিছু ঘটতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা নির্বাচনী জোট করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। গত ১০ অক্টোবর এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের এক সভায় নেতাদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিল। দলের ওই অংশ এখনো একই অবস্থানে আছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় যাওয়ার লাভ–ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা।
এ ছাড়া গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে বিএনপি–জামায়াতের বাইরে এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী জোটের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছিল এনসিপি। গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই জোটের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। এর আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত ওই চার দলের নেতারা বৈঠক করেছিলেন।
বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে এখনো মনে করেন, সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত অনেক কিছু ঘটতে পারে।
ওই বৈঠকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ) প্রস্তাবিত এই নির্বাচনী জোটে রাখার প্রস্তাব দেয় একটি দল। এর বিরোধিতা করেন এনসিপির নেতারা। অন্যদিকে এই জোটে আসা নিয়ে গণ অধিকার পরিষদে মতভেদ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত জোট করার বিষয়টি আর এগোয়নি।
প্রস্তাবিত জোট শেষ পর্যন্ত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে দুটি দলের দুজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৃথকভাবে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, জোট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় যাওয়ার লাভ–ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা।
এককভাবে নির্বাচন নাকি বড় কোনো দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা, কোন পথে এগোচ্ছে এনসিপি—এমন প্রশ্নে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে ৩০০ আসনে আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। আমরা এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রাখছি। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার সম্ভাবনাও আছে।’
আসিফ হাওলাদার
ঢাকা


















