বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামীকাল সোমবার। গত ২৬ মে শুরু হওয়া প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে। এখন ভোটের মাঠ উত্তাপহীন। ভোটাররা এখন ভোটের সমীকরণ নিয়ে ব্যস্ত, কে হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরিশালের নগরপিতা। প্রার্থীরাও ব্যস্ত আগামীকালের ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে। ভোটের সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল আহসানের সঙ্গে। তিনি বরিশাল সিটির প্রয়াত বিএনপিদলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে।
প্রচার-প্রচারণা শেষ হলো শনিবার মধ্যরাতে। কেমন ছিল প্রচার-প্রচারণার পরিবেশ?
কামরুল আহসান: কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল এবার ভোটের প্রচার-প্রচারণার পরিবেশ। সবাই নির্বিঘ্নে প্রচার চালালেও আমার পাঁচজন সমর্থককে মামলা ছাড়াই পুলিশ আটক করে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। আমার একটি প্রচারমাইক শুক্রবার রাতে ভাঙচুর করা হয়েছে। নানা মাধ্যমে আমাকে পরোক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই। ভোট সুষ্ঠু হলে আমি আশাবাদী। সুষ্ঠু ভোট নির্ভর করবে প্রশাসনের নিরপেক্ষতার ওপর।
প্রথম আলো: ভোট নিয়ে কি কোনো শঙ্কা আছে আপনার?
কামরুল আহসান: অবশ্যই শঙ্কা আছে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি ভোটও সুষ্ঠু হয়নি। আর দু-একটা সুষ্ঠু ভোট হলেও সেখানে তারা হেরেছে। এ ছাড়া এখানে প্রধানমন্ত্রীর ভাই দলটির মেয়র প্রার্থী। পাশাপাশি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট হয়—এটা মানুষ বিশ্বাস করে না। ফলে ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণার আগপর্যন্ত শঙ্কা আছে এবং থাকবে। ফলাফল ঘোষণার পর বলা যাবে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে কি না।
বিএনপি থেকে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভোট বর্জন করেছে আপনার দল। তারপরও আপনি কি মনে করেন বিএনপির সমর্থকেরা কেন্দ্রে যাবেন এবং আপনাকে ভোট দেবেন?
কামরুল আহসান: এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বিএনপির ভোট বর্জনের যুক্তির সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। আর আমাকে বহিষ্কার করলেই তো আমি বিএনপির লোক নই, ব্যাপারটা তা নয়। কারণ, আমার বাবা বরিশালে বিএনপির অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি এ শহরের মানুষের ভোটে কাউন্সিলর, পৌর চেয়ারম্যান এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বড় ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, বিএনপি ভোট বর্জন করলেও বরিশাল নগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের কেউ লাঙ্গল, কেউ নৌকার পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। এটা দুঃখজনক। তবে দলের সাধারণ সমর্থক-ভোটাররা আমার শক্তি। তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন এবং আমাকে ভোট দেবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপির সমর্থকেরা কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন, এটা কীভাবে বুঝলেন?
কামরুল আহসান: আমি আগেই বলেছি, এটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। এখানে দলমত–নির্বিশেষে ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকে। স্থানীয় উন্নয়ন, সামাজিক বন্ধন নানা বিষয় জড়িত থাকে। সেখানে রাজনীতি মুখ্য বিষয় থাকে না। এ ছাড়া বরিশালে এবার বিএনপির ১৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, জামায়াতের চারজন প্রার্থী আছেন। তাঁদের প্রত্যেকের শক্তিশালী অবস্থান আছে এলাকায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তাঁরা কাউন্সিলর পদে জয়ী হবেন। সব মিলিয়ে বিএনপির সমর্থকেরা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন, এতে সন্দেহ নেই।
সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে কোনো সমস্যা আছে? জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
কামরুল আহসান: না, এতে কোনো ধরনের সমস্যা এখনো হয়নি। এখন ভোটের দিন কী পরিস্থিতি হয়, সেটা দেখার বিষয়। তবে আমার বাবা ২০১৩ সালে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বৈরী পরিবেশের মধ্যেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।