বিএনপির পদযাত্রা ঘিরে ২২ মামলায় ১৫ হাজার আসামি

0
159
বিএনপি।

বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা, সহিংসতা, ভাংচুর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৯টি জেলায় দলটির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিসহ প্রায় ১৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দলটির ১১৮ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। এই আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ছিল পদযাত্রা। ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে সব মহানগর ও জেলায় এবং ১৯ জুলাই ঢাকায় এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সরকারবিরোধীদের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ৯টি জেলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে এসব মামলা দেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি কোথাও কোথাও সরকারি দলের কর্মী–সমর্থকেরাও মামলার বাদী হয়েছেন।

ঢাকায় দুটি, চট্টগ্রামে দুটি, লক্ষ্মীপুরে চারটি, ফেনীতে তিনটি, বগুড়ায় চারটি, খাগড়াছড়িতে তিনটি, জয়পুরহাটে দুটি, কিশোরগঞ্জ ও পিরোজপুরে একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭ জনকে। তবে লক্ষ্মীপুরে দুটি মামলার এজহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে এজহারে নাম উল্লেখ থাকা আসামির বেশির ভাগই বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৭০ জনকে। আর তিনটি (বগুড়ায়) মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ না করে বলা হয়েছে ‘অনেক’। কিছু মামলা হয়েছে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে।

সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত এসব মামলার মধ্যে চট্টগ্রামে দুটি মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা সবাই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কর্মী। আজ রোববার গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ড শুনানি হতে পারে। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত বগুড়ায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগরসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ছয়জন বিএনপির পদধারী নেতা। এ ছাড়া ঢাকায় ১৮ জন, খাগড়াছড়িতে ১৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ২৮ জন, জয়পুরহাটে ৩ জন, পিরোজপুরে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ফেনীতে এসব ঘটনায় করা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এসব মামলার উদ্দেশ্য, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া করা। ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রার প্রথম কর্মসূচি ঘিরেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, ২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করে বিএনপি। পদযাত্রায় লাখ লাখ লোক দেখে হতাশা থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন চট্টগ্রাম বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালান। সেই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি। উল্টো পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে মিথ্যা বানোয়াট মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরা নিজেদের কার্যালয়ের ভাঙচুর করে বিএনপির লোকজনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করেন।

দলটি দাবি করেছে, ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় হামলায় দলটির একজন নিহত এবং অন্তত তিন হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

২০১১ সালে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তখন থেকে এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। এই দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি। এর আগে তারা দেশব্যাপী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সে আন্দোলনে ‘জ্বালাও পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসের’ অভিযোগে সারা দেশে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় দলটির অনেক নেতা–কর্মী ‘গুম’ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।

ঢাকায় দুটি, চট্টগ্রামে দুটি, লক্ষ্মীপুরে চারটি, ফেনীতে তিনটি, বগুড়ায় চারটি, খাগড়াছড়িতে তিনটি, জয়পুরহাটে দুটি, কিশোরগঞ্জ ও পিরোজপুরে একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭ জনকে।

এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ এবং পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও সারা দেশে বিএনপির হাজার হাজার নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। ওই সময় বিভিন্ন জায়গায় ‘গায়েবি মামলা’ দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি বলছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে তারা ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছে। দলটির নেতাদের অনেকে আশঙ্কা করছেন, তাঁদের এই আন্দোলন ঘিরে সরকার আবারও আগের মতো হামলা–মামলা ও গ্রেপ্তারের পথেই হাঁটবে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এসব মামলার উদ্দেশ্য, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া করা। ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রার প্রথম কর্মসূচি ঘিরেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এ ছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে আবারও গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত সাত মাসে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কেবল আওয়ামী লীগের নেতারা বাদী হয়ে ৪০টি মামলা করেছেন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সময়ে করা এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১ হাজার ৭০১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা আরও ২ হাজার ৫৭৫ জন। এর বাইরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে ১০টি।

গতকাল ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন বিরোধী দলকে দমন করতে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে তারা (সরকার) বিরোধী দলকে দূরে রেখে নির্বাচন করার অপকৌশল করছে। কিন্তু নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার কোনো নির্বাচন হবে না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.