স্পেনের রাজ্য কাতালুনিয়ার অবস্থা ভালো নয় মোটেও। কাতালানদের স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজনকে কেন্দ্র করে নয়জন স্বাধীনতাকামী নেতাকে জেলে পুরেছেন স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট। নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে খোদ বার্সেলোনা। নেতাদের কারাবাস, সমর্থকদের ওপর পুলিশের আক্রমণ—সবকিছু মিলিয়ে দাঙ্গা-বিক্ষোভ চলছে কাতালুনিয়ায়। এমন অবস্থায় ‘এল ক্লাসিকো’ খেলতে বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল মাদ্রিদ এলে বিক্ষোভরত জনগণের রোষানলে পড়তে পারে তারা, এই কারণে ম্যাচটা পেছাতে চাইছে দেশটির ফেডারেশন।
সেই ২০১৭ সালে কাতালানদের স্বাধীনতা ঘোষিত হলেও স্পেনের সঙ্গে তাদের বৈরিতা কমেনি মোটেও। কাতালানদের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পেছনে যেসব নেতার ভূমিকা আছে, তাঁদের মধ্যে নয়জনকে এই সপ্তাহে জেলে পুরেছে স্পেন সরকার। জানিয়ে দিয়েছে, ৯ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত চৌদ্দ শিকের পেছনে থাকতে হবে তাঁদের। আর এই খবরেই ফুঁসে উঠেছে কাতালানরা। নেতাদের শাস্তির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে কাতালুনিয়া। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে স্বাধীনতাকামী কাতালানরা। যার ফলে রাজ্যের যোগাযোগব্যবস্থার অবনতি ঘটেছে ভীষণ। বিক্ষোভের কারণে গত মঙ্গলবার সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল এল প্রাট এয়ারপোর্ট। শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সড়কপথেও সঙিন অবস্থা। ওয়েলসের বিপক্ষে ইউরো বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন সেদিন। ২৬ অক্টোবর, যেদিন ক্লাসিকো হওয়ার কথা, সেদিন শহরব্যাপী বিক্ষোভ র্যালির ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতাকামী কাতালানরা।
এ কারণে ম্যাচের স্থান, কাল পরিবর্তনের চিন্তা করছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। ২৬ অক্টোবরের ক্লাসিকোটা ন্যু ক্যাম্পে নয়, বরং রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হোক, এই অনুরোধ করে স্প্যানিশ ফেডারেশনকে চিঠি পাঠিয়েছিল লা লিগা কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে লিগের পরের ক্লাসিকোটা বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্পে হবে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আর হবেই বা কেন? মৌসুমের শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় এল ক্লাসিকো, যে সময়ে প্রতিটি ম্যাচের ফলাফল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একটু এদিক-ওদিক হলে লিগের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপের মধ্যে ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। ওই অবস্থায় বৈরী পরিবেশে প্রতিপক্ষের স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলতেই বা চাইবে কেন রিয়াল?
এদিকে রিয়াল যদি এই প্রস্তাবে রাজি না হয়, তবে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েও লাভ নেই। কারণ, এত কম সময়ের নোটিশে ভেন্যুর পরিবর্তন করতে হলে দুই ক্লাবের পক্ষ থেকে সম্মতিসূচক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হতে পারে এল ক্লাসিকো।
শুধু এল ক্লাসিকো নয়, আন্তর্জাতিক বিরতির পর এই সপ্তাহে এইবারের বিপক্ষে ম্যাচটা কীভাবে খেলতে যাবে, তা নিয়েও চিন্তায় আছে বার্সা। আগামী শুক্রবার এল প্রাট বিমানবন্দরের সামনে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতাকামী কাতালানরা। বিমানে করে না যেতে পারলে ট্রেনে যাওয়া ছাড়া এইবার শহরে যাওয়ার উপায় নেই বার্সেলোনার। বার্সেলোনা থেকে এইবারের দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার, ট্রেনযোগে যেতে সময় লাগে ছয় ঘণ্টার মতো। যাত্রার ধকল সামলে কীভাবে বার্সেলোনা ফুরফুরে হয়ে মাঠে খেলতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখে দিয়েছে তাই।