এক যুগ ধরে সেতু অকেজো

0
85
বন্যায় সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার পর সড়ক আর নির্মাণ করা হয়নি। নেত্রকোনার কলমাকান্দার উদয়পুর বাজার-রিকা সড়কের দত্তখিলা এলাকায়। গত সোমবার তোলা

কলমাকান্দার এক সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় পাশের ধানখেতের কাদামাটির ওপর দিয়ে লোকজন হেঁটে আসা-যাওয়া করছেন।

এক যুগ আগে নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। নির্মাণের বছরখানেকের মধ্যে বন্যায় সংযোগ সড়ক ধসে যায়। পরে সংযোগ সড়ক করা হয়নি। ফলে ১২টি গ্রামের লোকজনের কোনো কাজে আসছে না সেতুটি। নেত্রকোনার কলমাকান্দার বড়খাপন ইউনিয়নের উদয়পুর বাজার থেকে রিকা সড়কের দত্তখিলা এলাকায় সেতুটির অবস্থান। নির্মাণের এত বছর পর সেতুটিও এখন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর নিচ দিয়ে ধানখেতের কাদামাটির ওপর দিয়ে মানুষ হেঁটে আসা-যাওয়া করছে। সেতুর পলেস্তারা ধসে পাথর বের হয়ে যাচ্ছে। সেতুতে শেওলা জমে আছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে বড়খাপন ইউনিয়নের পুটিকা, দত্তখিলা, নাগারগাতী, রিকা, হাইলাটি, বাউসারী, যাত্রাবাড়ীসহ প্রায় ১২টি গ্রামের মানুষকে চলাচল করতে হয়। এসব গ্রামের মানুষকে উপজেলাসহ শহরে যেতে হলে একমাত্র এই পথ দিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রতিদিন সেতুর পাশ দিয়ে হেঁটে প্রায় আট হাজার মানুষ চলাচল করেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য এই পথও কাঁচা। ফলে শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, সিএনজি ও ইজিবাইকে চলাচল করতে পারলেও বর্ষার মৌসুমে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বর্ষাকালে পথটি পানিতে তলিয়ে যায়। তখন নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

দত্তখিলা গ্রামের বাসিন্দা অবনিকান্ত সরকার বলেন, ‘সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও রাস্তাটি উঁচু করে পাকা করা হলে আমাদের যাতায়াত সহজ হতো। এখন খুবই কষ্ট করতে হয়। এ নিয়ে আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ এমপি মহোদয়ের কাছে কয়েকবার আবেদন করেছি। কিন্তু তাঁরা শুধু আশ্বাস দেন, এখনো কাজ হচ্ছে না।’

একই গ্রামের তপন সরকার বলেন, ১২ বছর আগে যখন সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন সংযোগ সড়কে কিছু মাটি দেওয়া হয়েছিল। বছরখানেক পরই বন্যায় মাটি সরে যায়। এর পর থেকেই সেতুটি শুধু দাঁড়িয়ে আছে। লোকজন এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না।

রিকা গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার সব রাস্তা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায়। তাই রাস্তাটি উঁচু করে সেতুর দুই পাশে মাটি দিলে ভালো হয়। আমরা কৃষিপণ্য ঘাড়ে-মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে কলমাকান্দাসহ স্থানীয় বাজারে যাতায়াত করি। বাচ্চারা কষ্ট করে হেঁটে স্কুল-কলেজে যায়। সড়কের অভাবে মুমূর্ষু রোগী, প্রসূতি, নবজাতক ও বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।’

জানতে চাইলে বড়খাপনের ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যতটুকু জানি, সেতুটি এক যুগ আগে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে একাধিকবার এই সেতুর সংযোগ সড়কসহ নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আবারও এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান যদি বরাদ্দ দেন, তাহলে সেতুর দুই পাশের মাটি কেটে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করা হবে। আর নতুনভাবে রাস্তাটি উঁচুসহ হেরিংবন্ড করার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.