বাবার ইচ্ছাপূরণেই আজ আমি কণ্ঠশিল্পী: মার্সেল

0
46
শাহরিয়ার মার্সেল

শাহরিয়ার মার্সেল। এ সময়ের আলোচিত সংগীতায়োজক ও কণ্ঠশিল্পী। নাটক, সিনেমায় প্লেব্যাক ও সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি নিজের ও বিভিন্ন শিল্পীর একক ও দ্বৈত গানের আয়োজন নিয়ে কাটছে ব্যস্ত সময়। সৃষ্টিতে নিজস্ব ভাবনা, আগামী পরিকল্পনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে

গানের প্রতিটি মাধ্যমে সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে কাজের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন? 

মাধ্যম ভিন্ন হলেও আমার কাজ কিন্তু একই, সুর-সংগীতায়োজন করা ও গান গাওয়া। সিনেমা বা নাটক, টেলিছবির জন্য গান তৈরি করতে হয় গল্প, চরিত্র ও বিভিন্ন ঘটনা উপস্থাপনার বিষয়টি মাথায় রেখে। একক বা দ্বৈত গানের অডিও-ভিডিওর জন্য গান তৈরিতে থাকে অপার স্বাধীনতা। যত ইচ্ছা সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া করা যায়। আমিও চেষ্টা করি, নিজস্ব ভাবনা থেকেই গান তৈরি করে যাওয়ার। এর পরও এটা সত্যি যে, ক্রিয়েটিভ কোনো কিছুই সহজ নয়। শিল্পী বা সুরকার হয়ে উঠতে হলেও তালিম নেওয়ার পাশাপাশি সাধনা করে যেতে হয়। কাজের মধ্য দিয়েই আমি এখনও সেটাই করে যাচ্ছি। এসব সম্ভব হয়েছে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা আর সমর্থনে। ছোটবেলা থেকেই তারা আমাকে গানের বলয়ের মধ্যে রেখে বড় করেছেন। সেই সুবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে স্নাতকোত্তর শেষ করার পাশাপাশি ভারতের মুম্বাই মিউজিক ইনস্টিটিউট থেকে ‘ইলেকট্রনিক মিউজিক অ্যান্ড সাউন্ড ডিজাইন’-এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ পেয়েছি। সেই শিক্ষা আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠার মানসিকতাই সংগীতের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করার সাহস জুগিয়েছে।

কিছুদিন আগ পর্যন্ত আপনাকে সবাই সংগীত পরিচালক হিসেবেই চিনত। এখন গান গাইতেও দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ কণ্ঠশিল্পী পরিচয় তুলে ধরার কারণ?

এই সময়ে এসে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জন্য নতুন নয়। গানের জগতে এসে অন্যের জন্য সুর করলেও সেই গানের ডামি কণ্ঠ দিয়েছি নিজেই। ডামি কণ্ঠ দেওয়া গানের সংখ্যাটাও চমকে দেওয়ার মতো। যার বেশির ভাগই অন্য শিল্পীদের দিয়ে গাইয়েছি। অথচ ছোটবেলাতেই আমার শিক্ষক বাবা-মার আগ্রহে গান শেখা শুরু হয়েছিল। আমার শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। যেখানে তখন গানের কোনো স্কুল ছিল না। এর পরও আমার বাবা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম অন্য এক জেলা থেকে শিক্ষক এনে গানের স্কুল করে গান শিখিয়েছেন। বাবার কারণেই ২০০২ সালে ‘নতুন কুঁড়ি’তে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং দ্বিতীয় স্থান লাভ করি। এরপর ২০০৪ সালে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। পরের বছর বাংলাদেশ সরকার আমাকে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হওয়ায় ‘জুনিয়র অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে জাপানে পাঠিয়েছিল। একই বছর ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ইয়ুথ ডেলিগেশন মেম্বার হিসেবেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি। এর পরও পেশাদারি ভাবনায় গানের জগতে পা রেখে সংগীতায়োজক হিসেবে কাজ শুরু করায় অনেকে অবাক হয়েছিলেন। তাই বাবার ইচ্ছার কথা ভেবে, এক পর্যায়ে এসে নিজের জন্য গান রেকর্ড শুরু করি; যা অনেকের ভালো লেগে যায়। এরপর ধীরে ধীরে সংগীতায়োজকের পাশাপাশি কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও সমানভাবে কাজ করতে থাকি। বলতে পারেন, বাবার ইচ্ছে পূরণেই আজ কণ্ঠশিল্পী।

এর মধ্যে নিজের গাওয়া নতুন কোনো গান রেকর্ড করেছেন?

কদিন আগে একটি নাটকের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। ‘সুখের দেশ’ শিরোনামের এই গানে আমার সহশিল্পী ছিলেন অবন্তী সিঁথি। কথা লিখেছেন সোমেশ্বর অলি। নিজেই এর সুর ও সংগীতায়োজন করেছি। এর পাশাপাশি ভিকি জাহেদের ওয়েব সিরিজ ‘টিকিট’, হৈচৈ প্ল্যাটফর্মের ‘রুমি’সহ একটি সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করছি। কিছু বিধিনিষেধের জন্য আপাতত সিনেমার নাম, পরিচালক কে– তা বলা যাচ্ছে না। সেখানে আমার সুরে বিভিন্ন শিল্পী গাইবেন, যার দু’একটি গানে নিজেও হয়তো কণ্ঠ দিতে পারি।

সংগীত পরিচালক হিসেবে আপনার ভাবনার জগৎটা কেমন, বলা যায় কি?  

আমার ভাবনার জগৎটা কেমন– তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। এটা বলতে পারি, কাজের বিষয়ে আমি এ আর রহমান, প্রীতম চক্রবর্তী, সেলিম-সুলেমান, কোল্ড প্লে, ইমাজিন ড্রাগনস, বাপ্পা মজুমদার, অর্ণব, হাবিব ওয়াহিদ, ফুয়াদ আল মুক্তাদীরের সংগীতে অনেকটা প্রভাবিত। তাদের মতোই আমার গানে নিজস্বতা ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কিছু তুলে ধরতে চাই; যা প্রতিটি সময়ের জন্যই কিছুটা আলাদা মনে হবে। তাই সুরের বিষয়ে কোনো ব্যারিয়ার রাখতে চাই না।

নতুনদের নিয়ে কোনো আয়োজনের কথা ভাবেন?

একেবারেই ভাবি না, তা নয়। ভাবি এবং তাদের জন্য একটি আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছি। ‘স্টুডিও ড্রপ বিট’ নামের এই আয়োজনে তরুণরা সুযোগ পাবেন তাদের গায়কির মধ্য দিয়ে দর্শক-শ্রোতার কাছাকাছি যাওয়ার।

শিল্পী ও সুরকার হিসেবে আগামী সময়টাকে কীভাবে দেখতে চান?

আমার লক্ষ্য শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণের মধ্য দিয়ে ভালোবাসা কুড়ানো। অভিনব আয়োজনে নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে চাই সব সময়। আর স্বপ্নের কথা যদি জানতে চান, তাহলে বলব, এ দেশের গান বিশ্বের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে– এই দৃশ্যটা দেখার জন্যই প্রহর গুনে যাচ্ছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.