বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) ফুটবলের বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষ ফিফা ও বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ফিফার দেওয়া অর্থ নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
আজ রোববার চেম্বার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর করা আবেদনটি আগামী ৯ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ মে হাইকোর্ট রুল দিয়ে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ২২ জুন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। আজ আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানিতে কাজী সালাউদ্দিনের নাম আবেদন থেকে প্রত্যাহারের আরজি জানান তাঁর আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আবদুল্লাহ আল মামুন খান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মুরাদ রেজা ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে ছিলেন।
পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বাফুফেতে ফিফার দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, এই অংশে আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থিতাবস্থা দিয়েছেন চেম্বার আদালত। তবে সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে অনিয়মের অনুসন্ধান চলবে। এতে আইনগত বাধা নেই।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চেয়ে গত মে মাসে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ মে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
রুলে কাজী সালাউদ্দিন, আবদুস সালাম মুর্শেদী, আবু নাঈমসহ বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা/ ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ফিফা ও সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে যুব ও ক্রীড়াসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত বৃহস্পতিবার বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর নাম উল্লেখ করে আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়।
কাজী সালাউদ্দিনের অন্যতম আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন বলেন, কাজী সালাউদ্দিন তাঁর নিয়মিত আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসির সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি ভুলবশত আবেদনটি করেন। আলোচনার পর আবেদন থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় ২২ জুন করা আবেদন থেকে কাজী সালাউদ্দিনের নাম প্রত্যাহার করতে আবেদন দেওয়া হয়। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত আবেদন থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন।