বাধার পরও খুলনায় বড় জমায়েতের প্রস্তুতি বিএনপির

0
112
বিএনপি

গণপরিবহন বন্ধ ও পুলিশের ধরপাকড় সত্ত্বেও খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলের নেতারা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই বিভাগের ৯ জেলা থেকে নগরীতে চলে আসবেন অনেক কর্মী। বিকল্প নানা উপায়ে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেবেন তাঁরা।

আগামী শনিবার দুপুরে খুলনা নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। শুক্রবার সেখানে তৈরি করা হবে মঞ্চ। এরই মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।

তবে আগামীকাল শুক্র ও শনিবার খুলনা বিভাগের সব জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। বিভিন্ন জেলায় চলছে ধরপাকড়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বুধবার দুপুরে খুলনা বিএনপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশে মালিক সমিতি বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ খুলনা বিভাগে ধরপাকড় শুরু করেছে। এরই মধ্যে যশোরে ৪৮ জন ও বাগেরহাটে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও ধরপাকড় করা হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, বাস বন্ধ ও ধরপাকড় করে বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান অভিযোগ করেন, পাইকগাছা ও রূপসায় লিফলেট বিলিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল রানা বলেন, বাস মালিকরা গাড়ি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি তাঁরা বিএনপিকে কোনো বাধাও দিচ্ছেন না।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, তাঁরা চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের তুলনায় বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা এবং মিছিল করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভাগে ৫ লাখ লিফলেট বিলি করা হয়েছে। টানানো হয়েছে ব্যানার ও কয়েক হাজার পোস্টার, বুধবার থেকে মাইকিং শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১২০টি মাইক টানানো হবে, যাতে সমাবেশ মঞ্চ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত নেতাকর্মীরা বক্তৃতা শুনতে পান। তাঁরা যাতে সমাবেশ মঞ্চ দেখতে পান সে জন্য কয়েকটি পয়েন্টে থাকবে প্রজেক্টর। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও ড্রোনের পাশাপাশি নিরাপত্তায় থাকবে বিএনপির ৪০০ নেতাকর্মী।

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার বিষয়টি শুরু থেকেই তাঁদের বিবেচনায় ছিল। সমাবেশের দিন বাসের পাশাপাশি অন্যান্য গণপরিবহনও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ও মহানগর বিএনপির দুই নেতা জানান, বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে শুরু থেকেই তাঁরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। শুক্র ও শনিবার বাস বন্ধ থাকায় বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে অনেক নেতাকর্মী বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে নগরীতে চলে আসবেন। নগরীতে যাঁদের আত্মীয়স্বজন আছেন, তাঁরা সেখানে থাকবেন। অন্যদের জন্য নগরীর অনেক আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস বুকিং করা হয়েছে। বিভিন্ন হল, অডিটোরিয়াম প্রভৃতি ভাড়া করে গণবিছানা করে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিকল্প হিসেবে ট্রেন, নদীপথে ট্রলার, পিকআপ, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে নেতাকর্মীরা আসবেন। কাছাকাছি এলাকার নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে হেঁটে আসবেন। সমাবেশের আগে পুলিশের ধরপাকড় এড়াতে কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সোনালী ব্যাংক চত্বর। দলের অনেক নেতাকর্মী ট্রলার, লঞ্চ ও ট্রেনে করে সমাবেশে আসবেন। নৌপথে লঞ্চঘাট ও ট্রেনে করে সমাবেশস্থলে আসা সহজ হবে।

মহানগর আহ্বায়কের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে খুলনার সবচেয়ে দূরের উপজেলা কয়রা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুলের কথার। বাবুল জানান, তাঁরা ২৫টি বড় ট্রলার ভাড়া করেছেন। প্রতিটিতে ১২০ জন করে ৩ হাজার নেতাকর্মী নৌপথে সমাবেশে যোগ দেবেন।

যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আমরা খুলনার সমাবেশে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছি। ভিন্ন কৌশলে তাঁরা খুলনায় যাবেন।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার বলেন, ট্রেন, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে করে তাঁরা সমাবেশে যাবেন। অনেকে আগেভাগেই চলে যাবেন খুলনায়। মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন জানান, বাস বন্ধ থাকলে বিকল্প উপায়ে, প্রয়োজনে হেঁটে মাগুরা থেকে নেতাকর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগদান করবেন। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ বলেন, নেতাকর্মীরা বুধবার থেকেই খুলনায় যেতে শুরু করেছেন। বিভাগের অন্যান্য জেলার নেতারাও একই রকম তথ্য দেন।

যোগ দেবেন মঞ্জু অনুসারীরা :গত ১১ মাস বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ফ্ক্রিয় থাকলেও খুলনার গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও তাঁদের অনুসারীরা। এরই মধ্যে দুই দফা প্রস্তুতি সভা করেছেন তাঁরা। আজকালকের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।

এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপি মহাসচিব আমাদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মঞ্চে আসন রাখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মহানগর বিএনপি ও ৫ থানার সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।

মনিরামপুরে পুলিশের হানা : মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ মঙ্গলবার রাতভর যশোরের মনিরামপুরে বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় অধিকাংশ নেতা বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ নেতাকর্মীকে আটক করে। তবে পুলিশের দাবি, এ অভিযান স্বাভাবিক চলমান প্রক্রিয়া। আটকদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। গতকাল বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে চালান দেওয়া হয়।

মামুন রেজা ও হাসান হিমালয়, খুলনা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.