বাঘাইছড়িতে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, গুলিতে প্রাণ গেল নিরীহ ব্যক্তির

0
85
বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন এসে বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান নেন। আজ দুপুরে, ছবি: সংগৃহীত

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে আঞ্চলিক দল ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুলিতে এক ব্যক্তি হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিনজন। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বাঘাইহাট বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. নাঈম (৩৫)। তিনি শান্তি পরিবহনের চালকের সহকারী। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাটে। ঘটনাস্থলের পাশেই বাসস্টেশন। গাড়ি নিয়ে সেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন, হঠাৎ তাঁর বুকে গুলি লাগে। তিনি সংঘর্ষের কোনো দল বা গ্রামবাসীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট বাজারে জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল অবস্থান করছে। গত কয়েক দিন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা ও সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ সকালে শত শত গ্রামবাসী জড়ো হয়ে বাঘাইহাট বাজারে এসে অবস্থান নেন। পরে জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের সদস্যদের খুঁজতে থাকেন। প্রথমে বাঘাইহাট বাজারে রাঙ্গুনিয়া আবাসিক হোটেলে হামলা করেন গ্রামবাসী। পরে বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া দল দুটির সদস্যদের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। এ সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শান্তি পরিবহনের চালকের সহকারী মো. নাঈম মাটিতে পড়ে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করে দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন। তাঁরা হলেন দুলেই চাকমা (২৫), চিক্কো মনি চাকমা (৩০) ও সোনামনি চাকমা (২৮)।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয় চৌধুরী বলেন, বাঘাইহাট বাজারে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি মারা গেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগে তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ বিকেলে ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, আজ বাঘাইহাট বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনে উজো বাজার ও মাচালং বাজারে নিতে চাইলে জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের সদস্যরা তাতে বাধা দেন। এতে ওই বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হন এবং এর প্রতিবাদে পর্যটন সড়ক ও বাঘাইহাট বাজারে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমার রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা বলেন, ইউপিডিএফের উসকানিতে এই হামলা হয়েছে। তাঁদের দলের কেউ হামলায় জড়িত নন।

সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, বাঘাইহাট বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ শান্তি পরিবহনের চালকের সহকারী নাঈম মারা গেছেন। তিনি সংঘর্ষে লিপ্ত দল ও গ্রামবাসীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাঘাইহাট বাজারের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান ওসি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.