বাগেরহাটে বইছে ঝোড়ো হাওয়া, বিদ্যুৎবিহীন প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক

0
75
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে তীরবর্তী এলাকা। ঘরে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন এক নারী। রোববার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার দড়াটানা নদীর তীরবর্তী পুরাতন ফেরিঘাটে এলাকায়

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র ঝোড়ো হওয়া শুরু হয়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। জেলার উপকূলীয় উপজেলা মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জে বাতাসের চাপ সবচেয়ে বেশি। আজ রোববার সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তে থাকায় দমকা হাওয়া বাড়তে শুরু করে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, রোববার বিকেল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ও বাতাস হলেও রাতে তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার কারণে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।

বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় সারা দিনই বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যান্য এলাকাতেও বিদ্যুৎ ছিল আসা–যাওয়ার মাঝে। তবে জেলা সদরের পৌর শহরে রোববার রাত সাড়ে ১০টায়ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে। তবে ঝোড়ো হাওয়ায় সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎ–সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।

উঁচু জোয়ারে প্লাবিত বনরক্ষীদের আবাসস্থল। 
আজ রোববার বিকেলে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়িতে
উঁচু জোয়ারে প্লাবিত বনরক্ষীদের আবাসস্থল। আজ রোববার বিকেলে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়িতে

৭০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের জন্য খোলা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। রোববার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান এই তথ্য জানান। অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের হিসাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষের সংখ্যা আরও কম হবে।

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঝড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা জনসাধারণের জন্য জেলায় ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। রোববার সকাল থেকে রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি, স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাঁচ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে মাইকিং করে। দুপুরের পর থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শুরু করে। রাত পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া চার হাজারের বেশি গৃহপালিত গরু–ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

ফেরি চলাচল বন্ধ

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাটের ৩ উপজেলার ৪টি পথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করায় রোববার দুপুরে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নদ-নদীতে দিনের বেলায় সীমিত পরিসরে ট্রলার চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাইনবোর্ড-বগি আঞ্চলিক সড়কে নদী পারাপারের মোরেলগঞ্জ ফেরি, শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের রায়েন্দা-মাছুয়া ও মোংলা উপজেলার মোংলা নদী ও পশুর নদের চলাচল করা ফেরিগুলো বন্ধ রেখেছে সড়ক বিভাগ। বিকেলে মোরেলগঞ্জে ফেরি চালু করে কিছু যানবাহন পারাপার করা হয়। তবে ঝোড়ো হাওয়ার কারণে সন্ধ্যা থেকে আবারও ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

সওজ বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য ফেরি পরিচালনা করা হয়েছে। এখন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জেলা সড়ক বিভাগের সব সড়ক স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.