বাংলাদেশ ২–২ নেপাল
জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিপূর্ণ হয়ে যায়নি। ৪০-৪৫ শতাংশ আসন ফাঁকাই থাকল। সিঙ্গাপুর, হংকং ম্যাচের মতো গ্যালারিতে গর্জন ওঠেনি সেভাবে।
নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে আজ রাতের গ্যালারি বরং নিশ্চুপই ছিল প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে হামজা চৌধুরীর জোড়া গোলে উজ্জীবিত হয়ে উঠলেও যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে নাটকীয়ভাবে জেতা ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে জুনিয়র সোহেল রানার জায়গায় নামে শমিত সোমকে নিয়ে। বিরতির পরপরই ম্যাচের রং যায় পাল্টে। পিছিয়ে থাকা ম্যাচে হামজা চৌধুরীর নৈপুণ্যে স্কোরলাইন ২-১।

শেষ পর্যন্ত গোল আর না বাড়লেও দর্শকেরা যখন পাঁচ বছর পর নেপালকে হারানোর স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ার স্বপ্ন দেখছেন, তখনই যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে অনন্ত তামাংয়ের টোকায় স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। সিঙ্গাপুর, হংকং ম্যাচের মতো আবারও শেষ সময়ে গোল খাওয়ার দৃশ্য ব্যথিত করেছে সমর্থকদের।
যা দেখে হতাশ হয়েছেন হামজাও। চোটের কারণে শেষ ১০ মিনিট তিনি মাঠে ছিলেন না। প্রথমার্ধে নিজেদের বক্সে হামজাকে কোনোভাবে নড়তে–চড়তে দেয়নি নেপাল। তাঁকে টেনে ধরে রেখেছে, কর্নারের সময় তো হামজার পাহারায় ছিলেন দু-তিনজন।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল আর পারেনি। হামজা নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে। দলের প্রয়োজনে আবারও গোল করেছেন। জাতীয় দলে ছয় ম্যাচে তাঁর গোল হয়ে গেছে ৪টি।
হামজার নৈপুণ্যে ভুটানকে হারানোর পর এবার নেপালের সঙ্গে ড্র করল বাংলাদেশ। ৮০ মিনিটে তাঁকে তুলে নামানো হয় কিউবা মিচেলকে, যাঁর অভিষেক হলো এ ম্যাচে।
বিরতির পর দ্বিতীয় মিনিটেই ফয়সাল আহমদের ক্রস নেপালের বক্সে। নেপালের এক ডিফেন্ডারের হেড যায় বক্সের ওপর। জামালের গোলমুখে ফেলা বল দারুণ বাইসাইকেল কিকে ১-১ করেন হামজা।

পরপরই পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। যা থেকে গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে সহজেই ২-১ করেন হামজা। প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ বিরতির পর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে রং বদলে দেয় ম্যাচের।
বাংলাদেশ দল নেপালকে সর্বশেষ হারিয়েছে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর। স্কোরলাইন ছিল ২-০। নেপাল সেই প্রীতি সফরে দ্বিতীয় ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে। এরপর গত ৫ বছরে দুই দল খেলেছে ৪টি ম্যাচ। দুটি জয় নেপালের, দুটি ড্র।
গত সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে সর্বশেষ সাক্ষাতে গোলশূন্য ড্র। ঠিক পাঁচ বছর পর আজ আবারও নেপালকে হারানোর সুযোগ হাতছাড়া হলো। আর তাতে ১৮ নভেম্বর এশিয়ান কাপের ভারত ম্যাচের প্রস্তুতিতেও থেকে গেল অতৃপ্তি।
ম্যাচের প্রথমার্ধটা মোটেও ভালো কাটেনি হাভিয়ের কাবরেরার দলের। বাংলাদেশ পরিকল্পনামতো খেলতে পারেনি, খেলায় ছিল না কোনো ছন্দ। মাঝমাঠ থেকে দেখা যায়নি কোনো সৃষ্টিশীল পাস। সোহেল রানা আর জামালের মধ্যে বোঝাপড়া দেখা যায়নি।

ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিটে নেপালের পোস্টে বাংলাদেশের শট ছিল মাত্র একটি। দ্বিতীয়ার্ধে ২টি গোল এলেও বাংলাদেশ যে আহামরি ফুটবল খেলেছে, তা বলা যাবে না।
সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর হংকং ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। চোটের কারণে বাদ পড়েন শেখ মোরছালিন। শমিত সোম ও শাকিল আহাদ ছিলেন একাদশের বাইরে। একাদশে ফেরেন সোহেল রানা জুনিয়র, জামাল ভূঁইয়া ও ফয়সাল আহমেদ। বাঁ পায়ের ফয়সালকে প্রথমার্ধে দেখা যায় রাইট উইংয়ে।
বিরতির পর নিজের জায়গা লেফট উইংয়ে আসেন ফয়সাল এবং প্রথমার্ধের তুলনায় ভালোও খেলেন।
বাংলাদেশ লিগে খেলা আটজনের মধ্যে নেপালের একাদশে ছিলেন পাঁচজন। ২৯ মিনিটে প্রথম গোল পেয়েছে তারা। প্রতি–আক্রমণে ডিফেন্ডার সুমিত শ্রেষ্ঠর কাটব্যাক থেকে বক্সের ওপর থেকে গড়ানো শটে ১-০ করেন রোহিত চাঁদ। দারুণ গোল! এটি ছিল জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর ১০২তম ম্যাচে দ্বিতীয় গোল। হারতে হারতেও ড্র করে নেপাল যেন জয়ের স্বাদ নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।

প্রেসবক্সে বসে ম্যাচ দেখে জাতীয় দলের গোলকিপার বিপ্লব ভট্টাচার্য হতাশ, ‘হামজা ম্যাজিকে জয় দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না। ম্যাচ দেখে মন ভরেনি। মাঝমাঠের কাছে যা প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। কিছুটা অগোছালো ফুটবল খেলেছে আমাদের দল।’


















