বাংলাদেশ আজ ভুগছে, কাল অন্য কেউ

0
176
গোপালগঞ্জে ভাসমান ধাপ থেকে সবজি তুলছেন এক কৃষক

বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের অন্যতম শিকার বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলা করছে দেশটি। এই সংগ্রাম থেকে বিশ্বের অন্য দেশগুলো শিক্ষা নিতে পারে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এর ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সংক্ষেপিত অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

জলাভূমির দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের প্রায় সব নদী হিমালয় থেকে নেমে এসেছে। বঙ্গোপসাগর মিশে যাওয়ার আগে নদীগুলোর শাখা-উপশাখা বিস্তৃত হয়েছে, সৃষ্টি করেছে জলাভূমি। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি।

পানি না পেয়ে কখনো খরা আবার পানি বেড়ে প্লাবন, বারবার ঘূর্ণিঝড় এবং উপকূলে নোনাপানি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব হুমকির সৃষ্টি হয়েছে; কখনো তা বাড়ছে, কখনো কমছে। এসব সংকট মোকাবিলা করতে লাখো মানুষ প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এই ব-দ্বীপের ১৭ কোটি মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ যে সংকটে ভুগছে, আগামীকাল অন্য অনেক দেশ সে সংকটে পড়বে। এই সংকট বাংলাদেশ যে কৌশলে মোকাবিলার চেষ্টা করছে, তা থেকে বাকি বিশ্ব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

ভারী বৃষ্টিতে উজান থেকে ঢল নামতে শুরু করলে বাংলাদেশে চাষিরা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বন্যার পানি থেকে খেত বাঁচাতে তাঁরা ভাসমান বীজতলায় সবজির চাষ করেন। ঘের করে চিংড়ি চাষের কারণে মাটি লবণাক্ত হয়ে ওঠায় তাঁরা টমেটো, ঢ্যাঁড়সের চাষ করছেন। তবে তা সাধারণ মাটিতে হচ্ছে না, হচ্ছে কম্পোস্টের ওপর। চিংড়ি বহনের জন্য ব্যবহৃত বাক্সেও এসব সবজি চাষ করা হচ্ছে। যেখানে ভূমিক্ষয় হচ্ছে, মানুষ তখন সেখান থেকে অন্য গ্রামে কিংবা শহরে চলে যাচ্ছেন। যেখানে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে, সেখানকার মানুষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে শুরু করেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের টাইম বোমা বিস্ফোরণের পথে

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এই পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘ধরুন, আপনার কাছে একটি ড্রাম আছে। এতে সাতটি ফুটো হয়েছে। এসব ফুটো বন্ধ করার জন্য আপনার মাত্র দুটি হাত আছে। আপনি কী করবেন? এটা কোনো সহজ কাজ নয়।’

বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। তবে দেশটির আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লাখো মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, শস্যবিমা বিস্তৃত করা, গ্রাম থেকে যেসব মানুষ যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য শহরে আবাসনের ব্যবস্থা করা। এমনকি প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে আবহাওয়ার তথ্য পেতে সম্পর্ক উন্নয়ন করাও এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম।

এসব কাজের জন্য ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে খুব সামান্যই সহযোগিতা পাওয়া যায়। এসব বিপদ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে তহবিল দরকার, তা ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া যায় না। এতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর হতাশা বাড়ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ২২ ও ২৩ জুন ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হলো ‘সামিট ফর আ নিউ গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং প্যাক্ট’।

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে অর্ধেকই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।

আগাম সতর্কবার্তা

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের কথা। বাংলাদেশের ভাটি এলাকায় কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মী রাকিবুল আলমের কাছে সুনামগঞ্জ থেকে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক সতর্কবার্তা পাঠান। ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেই বার্তা পেয়েছিলেন রাজধানী ঢাকা থেকে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

রাকিবুল বলেন, তাঁর কাছে বার্তা এসেছিল, ভারতের আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই বৃষ্টি হলে ঢল নেমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা হতে পারে। এমন সময়ে এই খবর আসে, যখন মাঠে মাঠে কৃষকের ধান পাকতে শুরু করেছে।

রাকিবুল জানতেন, সতর্কবার্তার মানে হলো তাঁকে এখন কৃষকদের যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটার জন্য রাজি করাতে হবে। পুরোপুরি ধান পাকার আগেই সেই ধান কেটে ঘরে তোলার ক্ষেত্রে কৃষকদের যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে, তা দূর করতে হবে। রাকিবুল বলেন, যেসব এলাকা হুট করে বন্যার শিকার হয়, সেই এলাকার কৃষকও ধান শতভাগ পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। তিনি জানতেন, কৃষকের সেই অপেক্ষা এবার মহাদুর্যোগের মতো হতে পারে।

সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে কার্বন নিঃসরণ যদি দ্রুত ও নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনা না যায়, তবে বাংলাদেশ ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজে খুব সামান্য কিছু করতে পারবে। আমরা যা করছি, তা আসলে যথেষ্ট নয়।’

তাই রাকিবুল তাঁর স্থানীয় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেন। কৃষকদের সংগঠনগুলোর নেতাদের ফোন করলেন, খুদে বার্তা দিলেন। স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামে গ্রামে মাইকিং করলেন। মসজিদের ইমামরা মাইকে এই বন্যা ও ফসল কাটার বার্তা প্রচার করলেন। বার্তাটা খুব পরিষ্কার ছিল, ‘যেকোনো সময় বন্যা আসতে পারে, ধান মোটামুটি পেকেছে, আর দেরি নয়।’

রাকিবুল এরপর খানিকটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। কারণ, কৃষকেরা তাঁর কথা শুনেছিলেন। লাগাতার ধান কাটার কাজ চলেছে। এমনটি ঈদুল ফিতরের ছুটিতে তাঁরা কাজ করেছেন। ২৫ এপ্রিল নাগাদ এই অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হয়। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, এবার ভারী বৃষ্টি হয়নি। ফলে উজানের ঢল থেকে বন্যা হয়নি। ফসল রক্ষা পেয়েছে।

বলতে গেলে এটি একটি মহড়া ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে ভারী বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে ভাটি অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি, তাতে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে খাদ্য ও পুষ্টিগুণকে পাল্টে দিচ্ছে

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়ও ঘূর্ণিঝড়ের আগে মানুষ এমন সতর্কবার্তা পেয়ে থাকেন। এরই নতুন একটি রূপ ছিল ভাটি অঞ্চলের জন্য এবারের সতর্কবার্তা। এই বার্তার কল্যাণে ফসল বাঁচানো গেছে।

বাংলাদেশের সরকার উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল অভিযোজন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারা নদী খনন করছে এবং সমুদ্রের জোয়ার নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ করছে। কিন্তু এর অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সমালোচকেরা বলছে, বড় অবকাঠামো নির্মাণকাজে অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি বেশি। এ প্রসঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন বিশ্লেষক ও বেসরকারি সংগঠন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা মো. জাকির হোসেন খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানে ঝুঁকি আছে। আবার দুর্নীতিরও আশঙ্কা আছে।

ভাসমান বাগান ও বাঘের পায়ের ছাপ

নদীতে যখন পানি বাড়বে ও আপনার ফসল ডুবে যাবে, তখন আপনি কী করবেন? আপনি যদি শক্তি কীর্তনীয়ার জায়গায় থাকতেন, তবে কৌশলে পানির ওপরে ফসল ফলাতেন। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছসুদ্ধ ফসল ওপরে উঠে যায়। এই ‘খেত’ পানির ওপর ভেসে থাকে। শক্তি বলেন, ‘আপনি যদি এভাবে ফসল ফলানো দেখেন, তবে বেশ আনন্দ পাবেন।’

এভাবে ফসল ফলানোর কৌশল শক্তি তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখেছেন। গোপালগঞ্জ জেলার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় তাঁর বাড়ি। ওই এলাকায় কোনো কোনো জমি বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পানির নিচে থাকে। সেখানে প্রায় ২০০ বছর ধরে এভাবে ফসল ফলানো হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে, বড় সময় ধরে জলাবদ্ধ থাকা এলাকা বৃদ্ধিরও ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে ভাসমান এই চাষ পদ্ধতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিগত পাঁচ বছরে সরকারের সহযোগিতায় দেশের ২৪টি জেলায় এই চাষ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে শক্তি কীর্তনীয়া এমন ভাসমান খেত তৈরি করেন। গ্রীষ্মকালে এই খেতে তরজুম ও শাক, শীতকালে বাঁধাকপি ও ফুলকপি উৎপাদন করেন তিনি। এই ভাসমান খেত তাঁর আয়ের উৎস। শক্তি বলেন, বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতে দেরি হোক কিংবা আগাম আসুক, এতে তাঁর কোনো সমস্যা হয় না। এমনকি দাবদাহেও তাঁর ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন: নতুন করে ভাবতে হবে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে

তবে এই এলাকা আরেকটি ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সেটা হলো, সমুদ্রের লোনা পানি এসব এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো, সমুদ্রপৃষ্ঠ ও জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া। নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণে প্রবাহ কমে যাওয়া। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ‘নোনতা ভবিষ্যৎ’ যে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে, সেটা গত বছরই টের পেয়েছেন শক্তি। তাঁর ভাসমান খেতের চারাগুলোর পাতা লাল হয়ে গিয়েছিল। নুইয়ে পড়ে ছিল চারাগাছ।

এই লবণাক্ততা ইতিমধ্যে ছড়িয়েছে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে থাকা সুন্দরবনে। বনের ৩ হাজার ৮৬০ বর্গমাইল এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে। ঝড়ের কবল থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় এই বনভূমির ভূমিকা অনন্য। এখানকার কাদামাটিতে একসময় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যেত। বর্তমানে এমন দৃশ্য প্রায় বিরল। এই বনের নদী ও খালগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। এতে সুন্দরীগাছ মারা যাচ্ছে। সেখানে অন্য গাছ জন্মাচ্ছে। ফলে সেখানকার প্রাকৃতিক ভূচিত্রই বদলে যাচ্ছে। ধারণা কর হচ্ছে, এই বদল চিরতরের।

সুন্দরবন এলাকায় পর্যটন নিয়ে কাজ করেন নজরুল ইসলাম। বন কর্মকর্তার ছেলে তিনি। সুন্দরবনে তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, লবণাক্ততা না কমলে সুন্দরীগাছের সংখ্যা আর বাড়বে। আবার এই লবণাক্ততা কমার কোনো সম্ভাবনাও নেই।’

ধরে রাখা হচ্ছে বৃষ্টির পানি

উপকূলের এই লবণাক্ততার কারণে প্রতিদিন ভোগেন শীলা বিশ্বাস। লবণাক্ত পানি তাঁদের এলাকার পুকুরে, খালে ঢুকে পড়ছে। এসব খাল ও পুকুর ছিল তাঁদের খাওয়ার পানির উৎস। উপকূলের প্রায় তিন কোটি মানুষ এই লবণাক্ততার কারণে ভুগছেন। শীলা যে এলাকায় বসবাস করেন, সেখানকার অবস্থা একটু বেশি খারাপ।

প্রায় ৩০ বছর আগে বিয়ে হয়েছে শীলার। বিবাহ সূত্রে তিনি যখন এই এলাকায় আসেন, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ ধানের চাষ করতেন এবং নিজের ঘরের ধানের ভাত খেতেন। পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করতেন তাঁরা।

কিন্তু একটা সময় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির চাষ শুরু হলো। চিংড়ির চাষ বাড়ল। চাষিরা খাল কেটে নদী থেকে লোনা পানি আনার ব্যবস্থা করলেন। একটা সময় গিয়ে শীলা বিশ্বাসদের পুকুরের পানিও অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে গেল।

প্রথম দিকে শীলা পানি কিনে খেতেন। এরপর একটা সময় দেখেন তাঁর প্রতিবেশী বৃষ্টির পানি ধরে রাখেন পানের জন্য। তিনিও বৃষ্টির পানি ধরে রাখা শুরু করেন। টিনের চাল থেকে পাইপের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেই পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন তিনি। শীলা এখনো লবণাক্ত পানিতে স্নান করেন। এতে তাঁর শরীরে ফুসকুড়ি হয়। এটা অবশ্য এই এলাকার সবাই বলেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই এলাকায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। অনিচ্ছাকৃত মাত্রাতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে তাঁরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।

শীলা যে ট্যাংকে পানি ধরে রাখেন, সেটি দুই হাজার লিটারের। এর সঙ্গে ফিল্টারও আছে। এই এলাকায় দরিদ্রদের সাহায্য করতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক চার হাজার ট্যাংক বিতরণ করেছে।

এদিকে চিংড়ি আর সাদা সোনা নেই। অধিক উৎপাদনের কারণে নতুন রোগ ঝুঁকি এনেছে এই চিংড়ি। শীলার অনেক প্রতিবেশী এখন চিংড়ির ঘের ভরাট করছেন। এখন অপেক্ষা করছেন কবে বৃষ্টিতে এই ভরাট করা ঘেরের লবণাক্ততা কমবে।

তবে এ ঘটনা যে সবার ক্ষেত্রে ঘটছে, এমনটা নয়। অনেকেরই জমির পরিমাণ কম। ফলে ঘের ভরাট করে জমি ফেলে রাখা কঠিন তাঁদের জন্য। শীলা বলেন, অনেকেই আর চিংড়ি চাষ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না। আবার তাঁরা পেশা পরিবর্তনও করতে পারছেন না।

মৌলিক চাহিদা খাওয়ার ও সুপেয় পানির তেষ্টা মেটাতে মানুষকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় অভাবনীয় সংগ্রামের এটি একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব মোকাবিলায় ২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন ১৬ হাজার কোটি ডলার। মূলত এ থেকে বোঝা যায়, জলবায়ু রাজনীতি নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের নেতারা কেন ক্ষুব্ধ।

সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে কার্বন নিঃসরণ যদি দ্রুত ও নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনা না যায়, তবে বাংলাদেশ ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজে খুব সামান্য কিছু করতে পারবে। আমরা যা করছি, তা আসলে যথেষ্ট নয়।’

সোমিনি সেনগুপ্ত নিউইয়র্ক টাইমসের জলবায়ুবিষয়ক প্রতিনিধি

সংক্ষেপিত অনুবাদ মোজাহিদুল ইসলাম মণ্ডল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.