বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় বলা হয় সাকিব আল হাসানকে। যা তিনি মাঠে পারফরম্যান্স দিয়ে অর্জন করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশকে ক্রিকেটকে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি দেওয়ার অন্যতম নায়ক হলেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের এখনও পর্যন্ত যা অর্জন সেটি হলো সাকিব আল হাসান।
পরিসংখ্যানও একই কথা বলে। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত যত ম্যাচে জয় পেয়েছে সেগুলোতে সাকিবের অবদান ছিল দুর্দান্ত। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ ভালো করলেও টেস্টে তাদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।
বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত মোট ৭৬টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে মোট ৯টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যার তিন ভাগের এক ভাগ এই নয় টেস্ট জয়ের তিনটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছে সাকিব আল হাসান। সাকিবের পরেই রয়েছে মুশফিকুর রহিম। দুটি সিরিজে সেরা হয়েছিলেন তিনি।
আসুন একনজরে দেখে নিই বাংলাদেশের ৯টি টেস্ট সিরিজ জয়ের নায়কদের
প্রথম- এনামুল হক জুনিয়র
২০০০ সালে টেস্ট বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস শুরু হলেও টাইগারদের প্রথম সিরিজ জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে চার বছর। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।
সেবার প্রথম ম্যাচে ২২৬ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ড্র হলে ১-০ তে সিরিজ জেতে স্বাগতিকরা। আর এই জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। দুই ম্যাচে ১৮ উইকেট শিকার করে সিরিজ সেরা হন তিনি।
দ্বিতীয়- সাকিব আল হাসান
২০০৪ সালে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতলেও সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি টাইগাররা। যার ফলে দ্বিতীয় জয়ের জন্য তাদের অপেক্ষ করতে হয়েছে আরও পাঁচ বছর। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ।
যেখানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে প্রথমবার বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের ইতিহাস লিখে টাইগাররা। এই সিরিজের ব্যাট হাতে ১৫৯ রান এবং ১৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন সাকিব। সেই সঙ্গে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের তকমা গায়ে লাগান এই বাঁহাতি ক্রিকেটার।
তৃতীয়- সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়টাও আসে দেশসেরা এই ক্রিকেটারের হাত ধরে। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। এই সিরিজের তিন ম্যাচেই দাপুটে পারফরম্যান্স করেছে করেছিল বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬২ রান এবং চতুর্থ ম্যাচে ১৮৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। এই সিরিজে ২৫১ রান এবং ১৮ উইকেট শিকার করেছিলেন সাকিব। তাই ম্যাচসেরা হন তিনি।
চতুর্থ- সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশের চতুর্থ টেস্ট সিরিজের ট্রফিটাও আসে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের নৈপুণ্যে। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে ৬৪ রান এবং দ্বিতীয় ম্যাচের মিরপুর ১৮৪ রানে পরাজিত হয় ক্যারিবিয়ানরা।
দুই ম্যাচের এই সিরিজের ব্যাট হাতে ১১৫ রান এবং বোলিংয়ে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে সিরিজ সেরা হন সাকিব।
পঞ্চম- মুশফিকুর রহিম
২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক মাত্র টেস্টে ১০৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের পঞ্চম সিরিজ জয়। এই সিরিজে ২০৩ রান করে করে প্রথমবার কোনো টেস্ট সিরিজে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মুশফিকুর রহিম।
ষষ্ঠ- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
বাংলাদেশে ষষ্ঠ টেস্ট সিরিজটা আসে মাহমুদউল্লাহর হাত ধরে। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক মাত্র টেস্টে ২২০ রানের বড় জয় পায় টাইগাররা।
এই ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫০ রান করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কার পান তিনি।
সপ্তম- মুশফিকুর রহিম
২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে এক মাত্র টেস্টে মাঠে নেমেছিল আয়ারল্যান্ড। মিরপুরে টাইগারদের বিপক্ষে সেবার ৭ উইকেটে ব্যবধানে হেরেছিল আইরিশরা।
এই সিরিজে প্রথম ইনিংসে ১২৫ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রান করেছিলেন। তাই দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
অষ্টম- নাজমুল হাসান শান্ত
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ২০২৩ সালটা ছিল শান্তময়। ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সব ফরম্যাটেরই ভালো করেছিলেন তিনি। এপ্রিলের আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর জুনে আফগানদের বিপক্ষে ৫৪৬ রানের ইতিহাস গড়া জয় পায় টাইগাররা।
নবম- মেহেদী হাসান মিরাজ
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাবনায় একজন ক্রিকেটার হলেন মিরাজ। অনেকে তাকে দ্বিতীয় সাকিবও বলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের নবম টেস্ট সিরিজ জয়টি এসেছে। পাকিস্তানের ঘরের মাঠে তাদের হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
এই সিরিজে খারাপ সময়ে দলকে টেনে তুলেছেন মিরাজ। ব্যাট হাতে ১৫৫ রান এবং বোলিংয়ে ফাইফারসহ ১০ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি।
মো. সাঈদুর রহমান