‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা

0
184
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বের হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা

পুরোনো হতাশা, গ্লানি আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়া এবং যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির বার্তা নিয়ে নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হলো আজ৷ যুদ্ধবিগ্রহের বিশ্বে শান্তির বার্তা কামনা করে শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে—‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।’

আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়৷ শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়৷

শোভাযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকে চারুকলা অনুষদ এলাকায় জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ৷ শোভাযাত্রার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ বিভিন্ন বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়৷ শোভাযাত্রা উপলক্ষে অর্ধমাস ধরে দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন চারুকলা অনুষদের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷ তাঁদের সেই পরিশ্রম আজ পরিণতি পেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে।

লোকসংস্কৃতির আলোকে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে নির্মিত ময়ূর, নীলগাই, ভেড়া, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও ট্যাপাপুতুলের (মা ও শিশু) কাঠামোও ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রায়
লোকসংস্কৃতির আলোকে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে নির্মিত ময়ূর, নীলগাই, ভেড়া, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও ট্যাপাপুতুলের (মা ও শিশু) কাঠামোও ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রায়

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আজ সকাল থেকেই চারুকলা অনুষদ এলাকায় আসতে থাকেন। এতে অংশ নিতে আসা নারীদের পরনে ছিল শাড়ি। অনেকের মাথায় ছিল নানা রঙের ফুল। পুরুষদের পরনে ছিল পাঞ্জাবি।

সকাল থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার কাঠামোগুলো চারুকলা অনুষদের সামনের সড়কে এনে রাখা হয়। ঘড়ির কাঁটা সকাল নয়টায় পৌঁছাতেই বেজে ওঠে ঢাক। মিনিট সাতেকের মধ্যে শুরু হয় শোভাযাত্রা৷ শোভাযাত্রায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। এর অগ্রভাগে ছিলেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াত, র‌্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও৷

ঢাকের তালে শোভাযাত্রার মুখোশ ও কাঠামো নিয়ে চারুকলা অনুষদ থেকে শাহবাগ মোড়ে যায় মিছিলটি। মিছিলের একটি অংশ ১৫ মিনিটের মধ্যে শাহবাগ মোড় ঘুরে চারুকলা অনুষদের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ করে। অন্য অংশটি ধীরে ধীরে আসতে থাকে। ওই অংশটি পৌনে ১০টার দিকে চারুকলার সামনে আসে। পরে সেটি টিএসসির দিকেও যায়। সকাল দশটার দিকে তাদের শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়৷

মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল নানা রঙের মুখোশ
মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল নানা রঙের মুখোশ

বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের আলোকে মুখোশ, ট্যাপাপুতুল, মাছ, পাখির প্রতিকৃতিসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান ছিল এবারের শোভাযাত্রায়। লোকসংস্কৃতির আলোকে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে নির্মিত ময়ূর, নীলগাই, ভেড়া, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও ট্যাপাপুতুলের (মা ও শিশু) কাঠামোও ছিল এতে। এসব তৈরিতে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। নববর্ষ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদের প্রাচীর ও স্কুলঘরের দেয়ালগুলোও বাহারি নকশায় সাজান তাঁরা৷

এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে গতকাল রাত থেকেই টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকাল থেকে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করেছে পুলিশ।

প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি সমন্বয় কমিটিও করে থাকে। চারুকলা অনুষদ নিজস্ব উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহ করে। এবারও অনুষদ প্রাঙ্গণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ খরচ করা হয় শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় দুই সপ্তাহ আগে৷

মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি
মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘যুদ্ধবিগ্রহের পরিবর্তে শান্তিময় বিশ্ব নির্মাণের বার্তা দিতে এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে—‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত৷’

তিন দশক ধরে প্রতিবছরই পয়লা বৈশাখে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.