বরিশালে মা ইলিশ নিধন ঠেকাতে পাহারায় থাকবে ড্রোন

0
14
মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন উপলক্ষে কীর্তনখোলা নদীতে নৌ শোভাযাত্রার আয়োজন করে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দপ্তর। শনিবার সকালে কীর্তনখোলা নদী

ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন রাখতে এবং মা ইলিশ সুরক্ষায় দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের অভয়াশ্রম বরিশালের মেঘনাসহ সন্নিহিত নদ-নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে শুরু হয়েছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তা বলবৎ থাকবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে ইলিশ ধরা, বিপণন, পরিবহন ও মজুত দণ্ডনীয় অপরাধ।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরিশালের হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, চাঁদপুরের হাইমচর থেকে শুরু করে ভোলার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদ-নদী, মেঘনা অববাহিকা ও শাখানদীগুলোয় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে প্রতিবছর ইলিশ শিকার করেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয় মৌসুমি জেলেরাও।

মৎস বিভাগ সূত্র জানায়, এবার এই তৎপরতা রোধে মৎস্য বিভাগ প্রথম প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে মাঠে নামবে। মাছ ধরা ঠেকাতে বরিশালের মেঘনা নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে আকাশে নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া জেলার নদ–নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যৌথ বাহিনীর তৎপরতা থাকবে কঠোরভাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও অভিযানে যুক্ত করা হবে। সঙ্গে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। নিষিদ্ধ সময়ে কেউ মাছ ধরলে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে হিজলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, এই অভিযান কেবল নদীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, হাটবাজার, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতেও তল্লাশি ও নজরদারি চলবে।

মোহাম্মদ আলম বলেন, অভিযান পরিচালনার জন্য মাঠে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যৌথ বাহিনীতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক স্পিডবোট নিয়ে টহলও চলবে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছি। এবার সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান পরিচালিত হবে।’

মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন উপলক্ষে কীর্তনখোলা নদীতে নৌ শোভাযাত্রার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দপ্তর। শনিবার সকালে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে

২০১৯ সালে সরকার মেঘনা ও আশপাশের নদ-নদীকে ঘিরে দেশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে এলাকাটিকে গেজেটভুক্ত করে। এই অভয়াশ্রমের সীমানা হচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদের হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাট পয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এই সীমানার মধ্যের নদ-নদীগুলো হচ্ছে কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, নয়ভাঙ্গুলী, গজারিয়া ও কীর্তনখোলা। অর্থাৎ বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার শাখানদীগুলো এর আওতায় রয়েছে।

বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগে ইলিশ ধরেন, এমন জেলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। তাঁদের মধ্যে ৩ লাখ ৪০ হাজার জেলেকে নিষেধাজ্ঞার সময়ে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় হাটবাজার, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালেও এবার কঠোর অভিযান চলবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৩-০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু হয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে-পরে ১১ দিন মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে গবেষণায় দেখা যায়, শুধু পূর্ণিমায় নয়, অমাবস্যাতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে। পরে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মিলিয়ে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.