বঙ্গভবনের বাসিন্দা হলেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন

0
183
সোমবার প্রথম দিন বঙ্গভবনে অফিস করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গভবনের নতুন বাসিন্দা হলেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এরপর গত রাত পৌনে নয়টায় সপরিবার বঙ্গভবনে উঠেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও বাসভবন।

রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান গতকাল বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত হয়। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক আমলা, বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

মো. সাহাবুদ্দিনকে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বঙ্গভবনের দরবার হলে, ছবি: পিআইডি

এমন এক সময়ে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন, যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। এই বিরোধের মূলে আছে নির্বাচনী ব্যবস্থা।

রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে কোনো ধরনের আলোচনা বা সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখবেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর করণীয় কিছু থাকলে তিনি তা করবেন। ১৭ এপ্রিল নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে।

মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গও এসেছিল। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, ভোটকেন্দ্রে জনগণের যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সেই দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাঁর আহ্বান থাকবে।

গতকাল সকালে নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পর বঙ্গভবনে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক দায়িত্ব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন—এটাই জাতির এবং তাঁর প্রত্যাশা।

আগামী ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ তাদের সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার কথা বলে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দলগুলোর বিরোধ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এই পটভূমিতে নতুন রাষ্ট্রপতি কী ভূমিকা নেন, সেদিকে অনেকের নজর থাকবে। সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে তিনি ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রত্যাশাও আছে বহু মানুষের।

নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবস্থাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না—১৭ এপ্রিল এই প্রশ্ন করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখন এ নিয়ে কিছু বলব না। আমি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখব, আমার করণীয় কী আছে। আমার করণীয় যা থাকবে, তা আমি করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। ’

একই সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার যা কিছু করার, আমি তা করব।’ তিনি আশা করেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আস্থা অর্জনের প্রশ্ন

আওয়ামী লীগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনীত করে। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর আগপর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হয়। কিন্তু সব অনুমান, নানা জল্পনাকল্পনা ভুল প্রমাণ করে তাঁকে প্রার্থী মনোনীত করে আওয়ামী লীগ। তখন দলটির নেতাদের অনেকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল এবং দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্ন বড় বিবেচনার বিষয় ছিল।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে সেই দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন অন্য দলগুলোর আস্থা কীভাবে অর্জন করবেন—এই প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার জীবনের ২৭ বছর সিনিয়র জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই দায়িত্ব একেবারে নিরপেক্ষভাবে পালন করেছি। কখনো কারও প্রতি পক্ষপাত করেছি বা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি—এ ধরনের কোনো অভিযোগের সম্মুখীন কখনো হয়নি।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করব। সংবিধানে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, তা আমি যথাযথভাবে পালন করব।’

বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এখন পর্যন্ত অভিনন্দন জানায়নি; বরং বিএনপি বলে আসছে, তারা যেহেতু এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে, ফলে সরকার কাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল, এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

মো. সাহাবুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেছেন, নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের প্রত্যাশা নেই।

বঙ্গভবনে উঠলেন গত রাতে, কর্মকাণ্ড শুরু আজ

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া প্রথা অনুযায়ী বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করেন। এর মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জানান, শপথ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবন থেকে গুলশানে তাঁর নিজের বাসভবনে যান। এরপর গত রাত পৌনে নয়টায় তিনি সপরিবার বঙ্গভবনে ওঠেন। তখন তাঁকে স্বাগত জানান বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে গার্ড অব অনার দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট। এরপর তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে, শহীদ মিনারে এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন।

এর আগে গতকাল শপথ অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে বঙ্গভবনের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে বিদায় জানানো হয়। বিদায় অনুষ্ঠান শেষে মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবন ছেড়ে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকায় একটি বাসায় উঠেছেন।

মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল শপথ নিয়ে সেদিনই বঙ্গভবনে উঠেছিলেন। যদিও এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার সময় এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর মো. আবদুল হামিদ ৪১ দিন ভারপ্রাপ্ত ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারের পদে ছিলেন।

টানা দুই মেয়াদে বঙ্গভবনের বাসিন্দা হিসেবে পুরো ১০ বছর থাকার পর গতকাল ওই ভবন ছেড়ে যান মো. আবদুল হামিদ। আর গত রাত থেকে শুরু হলো নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পাঁচ বছরের বঙ্গভবন-জীবন।

ছাত্ররাজনীতি দিয়ে শুরু, কর্মজীবনে বিচারক, পরে দুদক কমিশনার, এখন রাষ্ট্রপতি

মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম পাবনায়, ১৯৪৯ সালে। তিনি ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর মো. সাহাবুদ্দিন কারাবরণ করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার পর্যায়ে আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত ‘সমন্বয়কারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে বিসিএসের মাধ্যমে বিচার বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৭ বছর পর তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদকে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালে তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হন। পরে তিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। এই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি।

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গভবনে
নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গভবনে, ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত

সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামেই রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ড চলে। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান, কিন্তু তিনি সরকারপ্রধান নন। দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। শুধু দুটি স্বাধীন ক্ষমতা রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। তবে পরোক্ষ ক্ষমতার বিষয়ও আছে সংবিধানে। রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী তা পেশ করবেন।

পরোক্ষ ক্ষমতার বিষয়টি দেখলে মনে হবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেক, আসলে তা নয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ—এই দুটি কাজের ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির কারও পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা নেই।

তবে সংবিধানে এমন শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না, কিংবা পরামর্শ দিয়ে থাকলে তা কী, সেটি নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।

কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দণ্ডের মার্জনা বা ক্ষমা করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি

রাষ্ট্রপতিকে তাঁর দায়িত্বের ব্যাপারে কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে হয় না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো প্রকার ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। তাঁকে গ্রেপ্তার বা কারাগারে নেওয়ার জন্য কোনো আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যাবে না।

রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব ও বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তা আলোচনাতেই রয়ে গেছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত হলেও তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবকতুল্য এবং এই পদের একটি প্রতীকী মর্যাদা আছে। ফলে দেশের কোনো সংকটে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে সংকট সমাধানে তিনি ভূমিকা রাখতে পারেন।

সাধারণভাবেও এমন একটা ধারণা রয়েছে যে সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করাসহ কিছু ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। সে কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ অব্যাহত থাকায় নির্বাচন এলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আলোচনায় আসে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে নতুন রাষ্ট্রপতি ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রত্যাশার কথা বলছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

অন্যতম একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রবীর নিয়োগী বলেছেন, সংবিধানে ক্ষমতা না থাকলেও রাষ্ট্রপতি দেশের কোনো সংকট বা সমস্যা সমাধানে নৈতিক অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নিতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.