ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন প্রীতম

0
230
গ্রেপ্তার প্রতারক প্রীতম।

এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার নেওয়া হয় নানামুখী উদ্যোগ। এর ফলে এখন পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের কোনো তথ্য মেলেনি। তবে এরমধ্যেই ফেসবুকের কয়েকটি পেজে প্রশ্ন সরবরাহের বিজ্ঞাপন নজরে আসে গোয়েন্দাদের। এসএসসি ব্যাচ ২০২৩ নামে একটি পেজে প্রশ্নপত্রের ছবি দিয়ে বলা হয় ‘এইমাত্র এসএসসি ২০২৩ বাংলা দ্বিতীয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেলাম…প্রশ্ন পেতে ইনবক্স করুন।’

এরপর প্রযুক্তিগত তদন্তে জড়িত এক তরুণকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তিনি হলেন ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল রউফ প্রীতম। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগিতায় শুক্রবার রাতে তাঁকে আইনের আওতায় আনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি বলছে, প্রীতম দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। জুয়ার অর্থ যোগাতে ও বন্ধুদের নিয়ে ফূর্তি করার জন্য তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন। প্রশ্নপত্র সরবরাহের নামে তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে আসছিলেন। এজন্য তিনি বিমান বাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত তাঁর বাবা এবং মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলেন।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুক পেজ ও মেসেঞ্জারে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন প্রীতম। মেধার প্রমাণ না দিয়ে অসাধু উপায়ে ভালো ফল করতে চাওয়া কিছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা এতে আকৃষ্ট হন। অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই সুযোগ তিনি কাজে লাগান। প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য ১ হাজার ৫৫০ টাকা চান। টাকা হাতে পেলেই প্রশ্নফাঁসের গ্রুপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যুক্ত করা হবে বলেও জানান। এভাবে গত কয়েকদিনে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়েছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

ডিবি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রশ্নফাঁসের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারণা চলছিল। এরমধ্যে কয়েকটি হলো– এসএসসি ব্যাচ ২০২৩, এসএসসি শর্ট সিলেবাস ২০২৩ ও দেশ ভিউ। এসব পেজে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী হলে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হত। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং–এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হত টাকা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিতরণের কোনো পর্যায়েই প্রীতম বা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ জড়িত নন। এ কারণে তাঁর পক্ষে প্রশ্নপত্র পাওয়া ও ফাঁস করা একেবারেই অসম্ভব ছিল। সেক্ষেত্রে নানারকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষার্থীও তেমনটাই বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্তির কারণে তিনি প্রচুর অর্থ খুইয়েছেন। সে কারণে অর্থ সংগ্রহের জন্য এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বঙ্গবন্ধু বিমান বাহিনী ঘাঁটির সামনে থেকে শুক্রবার রাতে ডিবি লালবাগ বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম প্রীতমকে গ্রেপ্তার করে। ইতোমধ্যে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করে বাহিনীর সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কীভাবে তিনি এই অপকর্ম করে আসছিলেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

প্রীতমের চালানো ফেসবুক পেজগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো পেজ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নক্রেতার সঙ্গে কথোপকথনে দেখা যায়, প্রতি প্রশ্নের জন্য এক হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা পাঠানোর জন্য দেওয়া হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর। বোর্ডের আসল প্রশ্ন দেওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ৩০ এপ্রিল এসএসসির প্রশ্ন ফাঁসের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বগুড়ার ধুনটের মহিশুর এলাকা থেকে রবিন বাবু নামে এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের মনসুর আলী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.