ম্যাচ শুরুর পর প্রতিপক্ষ থিতু হওয়ার আগেই গোল করার অসংখ্য ঘটনা আছে ফুটবলে। কিন্তু কোনো কোনো গোল যেন চোখের পলক পড়ার আগেই হয়ে যায়। যেখানে সবচেয়ে দ্রুততম গোলটি এসেছে মাত্র ২.১ সেকেন্ডে। অর্থাৎ ফুটবল ইতিহাসে এর চেয়ে দ্রুততম সময়ে আর কোনো গোল হয়নি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফুটবল লিগ, কাপ বা অন্য প্রতিযোগিতার জুনিয়র, অপেশাদার, আধা পেশাদার, পেশাদার এবং নারী ফুটবল মিলিয়ে দ্রুততম ১০টি গোলের কথা ফুটবলভিত্তিক পোর্টাল ‘গিভমিস্পোর্ট’—এর আলোকে এখানে তুলে ধরা হলো।
ওয়ারভারজভালউভেন বনাম এলটিসি
২০১৪ সালে ডাচ ফুটবলের পঞ্চম স্তরের এক ম্যাচে ওয়ারভারজভালউভেনের হয়ে বার্ট ফন ডার ভের ৩.৬ সেকেন্ড সময়ে গোল করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ইতিহাস গড়া এই গোল তিনি করেছিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে। সেই ম্যাচে তাঁর দল জিতেছিল ৪–২ গোলে। ফন ডার ভের গোলটি করেছিলেন সরাসরি কিক-অফ থেকে।
লিংফিল্ড বনাম ওকউড
২০১৭ সালে পিটার বেন্টলি চ্যালেঞ্জ কাপের একটি ম্যাচে লিংফিল্ডকে ৬–২ গোলের জয়ে পথ দেখান রিচার্ড ওয়েটন। সেদিন ওকউডের বিপক্ষে ম্যাচের মাত্র ৩.৫৭ সেকেন্ডের মাথায় কিক–অফ থেকেই গোল করেন তিনি। মজার বিষয় হচ্ছে শুরুতেই গোল খাওয়ার পর ৪০ সেকেন্ডের মাথায় সেটি শোধও করে দেয় ওকউড। যদিও তারা ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেনি। আধডজন গোল দিয়ে বাজিমাত করে লিংফিল্ডই।
ব্যারো বনাম কেটারিং টাউন
কোলিন কাউপারথোয়েট ছিলেন ইংলিশ ফুটবলের চতুর্থ সারির ক্লাব ব্যারোর সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার। ইতিহাসের অষ্টম দ্রুততম গোলটিও করেছেন এই ক্লাবের হয়েই। ১৯৭৯ সালে কেটারিং টাউনের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৩.৫৫ সেকেন্ডে গোলটি করেন কাউপারথোয়েট। সেই ম্যাচটিতে ৪–০ গোলে জিতেছিল ব্যারো।
আমেরিকা মিনেইরো বনাম ভিলা নোভা
ফেদেরিকো শাভেস গুয়েদেস, যাঁকে ফুটবল দুনিয়া চেনে ফ্রেদ হিসেবে। ২০০৩ সালে তিনি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ইতিহাসের দ্রুততম গোলটি করেন। ৩.১৭ সেকেন্ডে করা এই গোল এখন ফুটবল ইতিহাসের দ্রুততম গোলের তালিকায় ৭ নম্বরে। ২০০৩ সালে আমেরিকা মিনেইরোর হয়ে খেলার সময় ভিলা নোভার বিপক্ষে গোলটি করেন তিনি। ভিলা গোলরক্ষকের লাইন ছেড়ে অনেক সামনে বেরিয়ে আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলটি করেন ফ্রেদ। ইতিহাস গড়া গোলের পরও ম্যাচে অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৫–১ হেরে যায় মিনেইরো।
নেগ্রো ক্যাপিটাল বনাম সোরিয়ানো ইন্টেরিয়র
১৯৯৮ সালে উরুগুয়ে অ্যামেচার কাপের ম্যাচে নেগ্রো ক্যাপিটালের হয়ে ইতিহাস গড়া গোল করেন রিকার্ডো অলিভেরা। মাঝ মাঠ থেকে মাত্র ২.৮ সেকেন্ডে সোরিয়ানোর বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করেন এই উরুগুইয়ান ফুটবলার। এই গোলে গতিকে দারুণভাবে কাজে লাগান অলিভেরা। এই গোল ছিল সে সময় ইতিহাসের দ্রুতমম গোল। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতা হয়নি নেগ্রোর। রেকর্ড গড়েও অবশ্য ১–১ গোলের ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দলটিকে।
কাউস বনাম ইস্টলি
২০০৪ সালে মাত্র ২.৫৬ সেকেন্ডে গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাব কাউস স্পোর্টসের মার্ক বারোর্স। ইস্টলি রিজার্ভাসের বিপক্ষে ম্যাচে সতীর্থ টোকায় বল পেয়ে দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। সেদিন মাঠে থিতু হওয়ার আগেই গোল খেয়ে বসে ইস্টলি। এই গোলের পর শেষ পর্যন্ত কাউস ম্যাচ জিতেছিল ৫–৩ গোলে।
রাসথল বনাম চাথাম টাউন
বারোর্সের চেয়ে মাত্র .৪ সেকেন্ড কম সময় নিয়ে ইতিহাসের চতুর্থ দ্রুতম গোলটি করেছিলেন জ্যাক লায়নস। ২০২৩ সালে এফএ ইয়ুথ কাপের ম্যাচে চাথামের বিপক্ষে ৫০ গজ দূর থেকে গোলটি করেন রাসথলের বারোর্স। মূলত লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষককে দেখেই আচমক শটটি নিয়েছিল লায়নস, যা তাকে দ্রুততম গোলের তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে।
ক্রয়ডন এফসি বনাম ককফোস্টার্স
শীর্ষ দশে থাকা দ্রুততম গোলের মধ্যে এটিই সাম্প্রতিকতম। ২০২৪ সালে লন্ডন সিনিয়র ট্রফির ম্যাচে ক্রয়ডন এফসির হয়ে গোলটি করেন রায়ান হল। ককফোস্টার্সের বিপক্ষে ৩–০ গোলের জয়ে এই গোলটি রায়ান যখন করেন, তখন ম্যাচের বয়স ২.৩১ সেকেন্ড। কিক–অফ থেকেই সরাসরি শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রায়ান।
জিএসপি পোলেট বনাম এফকে ডোরচল
২০১২ সালে সার্বিয়ার একটি যুবদলের ম্যাচে জিএসপি পোলেটের হয়ে মাত্র ২.২ সেকেন্ড গোল করে হইচই ফেলে দেন ভুক বাকিচ। এটি ছিল সে সময়ের সবচেয়ে দ্রুততম গোল। বাকিচের এই গোল তাঁর দলের ৪–১ গোলে জয়ের পথও সুগম করে। বাকিচের এই গোলটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ সেদিন মাঠের অবস্থা খেলার জন্য মোটেই উপযোগী ছিল না। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব প্রতিকূলতা জয় করে ইতিহাসে নাম লেখান বাকিচ।
ম্যারিহিল বনাম ক্লাইডব্যাঙ্ক
৫ বছর টিকে থাকার পর অবশেষে ২০১৭ সালে এসে ভেঙে যায় বাকিচের রেকর্ডটি। ক্লাইডব্যাঙ্কের বিপক্ষে ম্যারিহিলের হয়ে গোলটি করেন গাভিন স্টোকস। স্কটিশ ফুটবলের নিচের সারির ম্যাচে এই গোল করতে সময় লাগে মাত্র ২.১ সেকেন্ড। সেদিন রেফারির ম্যাচ শুরুর বাঁশির রেশ শেষ হওয়ার আগেই লক্ষ্যভেদ করেন স্টোকস। ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম এই গোলের পর ম্যারিহিল ম্যাচটা জেতে ৩–০ গোলে। দুর্দান্ত এই রেকর্ডের মালিক স্টোকস অবশ্য এখন আর বেঁচে নেই। ২০২২ সালের অক্টোবরে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৩০ বছর বয়সে মারা গেছেন তিনি।
