ফাইভ–জি ফোনের বাজারে ফিরছে চীনের হুয়াওয়ে

0
188
বাজারে ফিরছে হুয়াওয়ে

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত চীনের কোম্পানি হুয়াওয়ে এ বছরের শেষভাগে ফাইভ–জি প্রযুক্তির বাজারে ফিরতে চায়। রয়টার্সের খবরে বলা হচ্ছে, ফাইভ–জি প্রযুক্তির বাজারে হুয়াওয়ের প্রত্যাবর্তন একভাবে তার বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো ফাইভ–জি প্রযুক্তির অবকাঠামোতে হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। সেই সঙ্গে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে তারা।

২০২০ সালে হুয়াওয়ের ভোক্তা ব্যবসা থেকে যেখানে ৬৭ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় হয়েছিল, ২০২১ সালে তা অর্ধেক কমে যায়। এর পরের তিন বছর তারা কেবল ‘টিকে থাকার’ লড়াই করেছে।

চীনের স্মার্টফোন বাজার নিয়ে কাজ করা তিনটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, হুয়াওয়ের যে নিজস্ব প্রযুক্তি আছে, তা দিয়ে তার পক্ষে ফাইভ–জি চিপ বানানো সম্ভব। সেই সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির (এসএমআইসি) সহযোগিতাও তারা পাবে। তবে এই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি।

সেই সঙ্গে হুয়াওয়ে নিজেও এ বিষয়ে রয়টার্সকে কিছু বলতে রাজি হয়নি। মতামত জানতে চাওয়া হলে এসএমআইসিও সাড়া দেয়নি।

একসময় স্মার্টফোন তৈরিতে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত হুয়াওয়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের পক্ষে চিপ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর তারা কেবল মজুত চিপ দিয়ে হাতেগোনা কিছু স্মার্টফোন উৎপাদন করেছে। সে কারণে তাদের এই দুর্গতি।

শুধু ফোর–জি প্রযুক্তির স্মার্টফোন বিক্রির কারণে হুয়াওয়ে গত বছর বিশ্বের অধিকাংশ র‍্যাঙ্কিং থেকে বাদ পড়ে যায়। তাদের বেচাকেনাও একেবারে কমে যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বাজারের ১০ শতাংশ হিস্যা এখন তাদের, পরামর্শক সংস্থা ক্যানালিস এ তথ্য দিয়েছে।

সেই তিনটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের একটি রয়টার্সকে ফাইভ–জি প্রযুক্তিতে হুয়াওয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছে। তারা মনে করছে, হুয়াওয়ে এসএমআইসির এন প্লাস ওয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ উৎপাদন করতে পারে, যদিও সেই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চিপের ৫০ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। বছরে তারা ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ ইউনিট ফাইভ–জি প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোন বাজারজাত করতে পারবে। তবে আরেক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মনে করছে, হুয়াওয়ে বছরে এক কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করতে পারবে।

অথচ ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করেছে। ক্যানালিস বলছে, সে বছরেই হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন উৎপাদন করে। এরপর তারা একটি কারখানা বিক্রি করে দেয়, যেখানে তাদের স্মার্টফোনের এক–পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হতো।

এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত চায়না সিকিউরিটিস জার্নাল এ মাসেই জানিয়েছে, হুয়াওয়ে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করেছে। বছরের শুরুতে তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বছরে তিন কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করা; সেটা বৃদ্ধি করে এখন তারা চার কোটি ইউনিটে উন্নীত করেছে। যদিও তারা বলেনি, হুয়াওয়ে ফাইভ–জির বাজারে প্রত্যাবর্তন করছে।

সেই তিনটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আরও বলেছে, হুয়াওয়ে চলতি বছর আইফোনের প্রতিদ্বন্দ্বী মডেল পি৬০-এর ফাইভ–জি ভার্সন নিয়ে আসতে পারে। এটি বাজারে আসতে পারে ২০২৪ সালে। বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তাদের স্মার্টফোনে ব্যবহার করতে পারে না। সেই সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপভিত্তিক অন্যান্য সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত। স্বাভাবিকভাবেই হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের আবেদন চীনের বাইরে তেমন একটা নেই বললেই চলে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.