চার বছর আগে এ কাজ যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন এর ঠিকাদার ছিলেন আলোচিত ইমতিয়াজ হাসান রুবেল।
ফরিদপুর সদর উপজেলার একটি গ্রামীণ সড়কের পিচঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সড়কের অন্তত আটটি জায়গা ধসে গেছে। ওই সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়মের জন্য ধসে পড়ার এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের মমিন খাঁর হাট এলাকায় আইজদ্দিন মৃধার ডাঙ্গী গ্রামে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এ সড়ক ওই গ্রামের জোড়া সেতু এলাকা থেকে শুরু করে আফজাল মণ্ডলের হাট হয়ে চলে গেছে বালুধূম পর্যন্ত।
সড়কটির দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ২০ মিটার। জোড়া সেতু থেকে মোজা শেখের বাড়ি পর্যন্ত ৮০০ মিটার অংশ নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের বাকি অংশ সংস্কার করা হচ্ছে। ৮টি জায়গায় ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে নতুন নির্মিত সড়কের ওই ৮০০ মিটার অংশে।
এলাকাবাসী জানান, গত ২১ জুন এ সড়কে পিচঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়। এর ৯ দিনের মধ্যে ৩০ জুন থেকে ওই সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়তে থাকে। চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তুহিন মণ্ডল বলেন, ‘শুরুতেই আমি বলে আসছিলাম, এ রাস্তা টিকবে না। সরু একটি রাস্তা ওপর থেকে কেটে সেই মাটি পাশে দিয়ে চওড়া করা হয়েছে। তবে এলজিইডির কাজ এলজিইডির কর্মকর্তারাই দেখভাল করেন। আমাদের কথা সেখানে ধোপে টেকে না। তারপরও একাধিকবার এ বিষয়ে বলেছি। কিন্তু আমাদের কথায় কান দেওয়া হয়নি।’
গত রোববার সকালে সরেজমিনে সড়কের পাশের ইট ধসে পড়ার সত্যতা মিলেছে। সড়কের এক পাশে পুকুর রয়েছে। ওই দিকে ধসের গভীরতা বেশি। সড়কের দুপাশের ইটগুলো খসে খসে পড়ছে।
এলাকাবাসী জানান, আগে এখানে ইট বিছানো একটি রাস্তা ছিল। সেটি প্রশস্ত করে পিচঢালাই করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই সড়কটির অন্তত আটটি জায়গা ধসে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসাহাক মাতুব্বর বলেন, ‘কোনোরকমে ডইলা কাজ শেষ করা হয়েছে। সড়কের মাটি রোলার দিয়ে দাবানো হয়নি। কোদাল দিয়া সমান কইরা পাড়াইয়া বসানো হইছে।’ আরেক বাসিন্দা মো. হারুন শেখ বলেন, ‘আগে ইট বিছানো যে রাস্তা ছিল, তার থেকে নিচু কইরা এ রাস্তা করা হইছে। রাস্তা সমান না করে উঁচু-নিচু করে যেনতেনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির জন্য পানি জইমা রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ধইসা গেছে।’
এলজিইডি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২ কিলোমিটার ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ২২৮ টাকা। চার বছর আগে এ কাজ যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন এর ঠিকাদার ছিলেন ইমতিয়াজ হাসান রুবেল (ফরিদপুরের বিতর্কিত দুই ভাইয়ের একজন)।
২০২০ সালের ৭ জুন দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে কাজটি পান ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল। মো. জামাল সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের এপিএস এ এইচ এম ফোয়াদের ঘনিষ্ঠ। তবে মো. জামালও কাজটি করছেন না। জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সাব-ঠিকাদার হিসেবে এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন সদরের ডিক্রিরচর মহল্লার বাসিন্দা মজিবর রহমান। কাজের মেয়াদ ছয় মাস।
সাব-ঠিকাদার মজিবর রহমান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এলজিইডির প্রকৌশলীরা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, ‘এ কাজে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তারপরও কাজ করতে হচ্ছে।’
নিম্নমানের কাজ কিংবা রাস্তা উঁচু-নিচু হয়েছে—এ অভিযোগ মজিবর রহমান নাকচ করে দিয়ে বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে, তা অতিবৃষ্টির জন্য। দ্রুত ভেঙে যাওয়া জায়গাগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। নির্মাণের পর এক বছর সড়ক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকে। তাই কাজ না করে বিল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কাজের তদারকিতে নিয়োজিত এলজিইডি ফরিদপুরের সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, এ সমস্যা বৃষ্টির কারণে হয়েছে। পাশাপাশি মাটি বালুযুক্ত হওয়ায় সমস্যা প্রকট হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সড়কের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। ধসে পড়া অংশ মেরামত না করে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না। সব কাজ ঠিকঠাক বুঝে নেওয়ার পরই বিল ছাড় দেওয়া হবে।