অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় প্রোস্টেট ক্যানসারের কোনো উপসর্গ থাকে না। আবার উপসর্গ থাকলেও সেসবকে সাধারণ সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন অনেকেই। সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. রেজা আহমদের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসার সম্পর্কে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
সাধারণত ৫০ বছর বয়স পেরোনো পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। যাঁদের ওজন অতিরিক্ত কিংবা যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এ রোগের ঝুঁকি বেশি।
তবে একজন পুরুষ প্রোস্টেট ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকুন কিংবা না থাকুন, কিছু উপসর্গ দেখা দিলে প্রত্যেকেরই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ে রোগনির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে এই ক্যানসার নিরাময় করা সহজ হয়।
কিছু উপসর্গ জানা থাক
প্রোস্টেট ক্যানসার হলে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে। তাই প্রস্রাব করতে অসুবিধা হতে পারে। প্রস্রাব শুরুর সময় প্রস্রাবের প্রবাহ আটকে যাচ্ছে বলে মনে হতে পারে। প্রস্রাব করার সময়ও প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে।
অল্প অল্প করে প্রস্রাব হতে পারে। প্রস্রাব করার পরও মনে হতে পারে, মূত্রথলিতে হয়তো প্রস্রাব রয়ে গেছে। বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষত রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে প্রস্রাবের চাপে।
কারও কারও প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়াও হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত আসতে পারে। তলপেট, কোমর বা নিতম্বে ব্যথা বা অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি হতে পারে। অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যেতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্ত বা অবসন্ন লাগতে পারে।
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে পারেন প্রোস্টেট ক্যানসার আক্রান্ত একজন রোগী। উত্থানত্রুটি দেখা দিতে পারে। বীর্যের সঙ্গে রক্তও আসতে পারে। বীর্য নির্গমনের সময় ব্যথা থাকতে পারে।
উপসর্গ দেখা দিলে
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই প্রোস্টেট ক্যানসার হয়েছে ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। অন্যান্য অনেক রোগেই কাছাকাছি ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বয়সজনিত কারণে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া কিংবা মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
ঠিক কী কারণে এমন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা নির্ণয় করা জরুরি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত দ্রুততম সময়ে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন চিকিৎসক। কারণ অনুযায়ী দেবেন চিকিৎসা।
যিনি সুস্থ আছেন
অনেক ক্ষেত্রেই প্রোস্টেট ক্যানসারের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই কোনো উপসর্গ না থাকলেও ৫০ বছর বয়স পেরোনো একজন পুরুষের প্রতিবছর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। রক্তের পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) পরীক্ষা করালে এ সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিশেষত যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখা আবশ্যক।
এ ছাড়া তরুণ বয়স থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার চর্চা করা প্রয়োজন প্রত্যেকেরই। ওজন রাখা উচিত নিয়ন্ত্রণে। লাল মাংস ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপান বর্জনীয়। শরীরচর্চার অভ্যাসও গড়ে তোলা প্রয়োজন।