যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চীনের পক্ষ থেকে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চীনের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে দেখবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। তবে ট্রাম্প সেই রীতি ভেঙে তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেই তালিকায় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নামও রয়েছে।
চীন বলেছে, ‘নতুন এ যুগে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করতে যথাযথ উপায় খুঁজে বের করতে’ নতুন মার্কিন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দায়িত্ব নিতে যাওয়া উপলক্ষে চীনেরও প্রস্তুতি চলছে। তিনি চীনা পণ্য আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত মার্কো রুবিও চীনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও অগ্রসর প্রতিপক্ষ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি কখনো বিদেশে কোনো শপথ অনুষ্ঠান বা রাজ্যাভিষেকে যোগ দেননি; বরং তাঁর পক্ষে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। ২০১৭ ও ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত।
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি কখনো বিদেশে কোনো শপথ অনুষ্ঠান বা রাজ্যাভিষেকে যোগ দেননি; বরং তাঁর পক্ষে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। ২০১৭ ও ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত।
অন্য দেশে সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে পাঠানো হয়ে থাকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হান। তাঁর পূর্বসূরি ওয়াং কিশান ২০২২ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ও ২০২৩ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চীনা রাজনীতিবিষয়ক ফেলো নীল থমাস মনে করেন, হানকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর মধ্য দিয়ে সি আসলে ট্রাম্পের সমঝোতা করার মানসিকতা তৈরি করতে চান। তবে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে সহ–অভিনেতার ভূমিকায় থাকতে চান না তিনি।
হানকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর মধ্য দিয়ে সি আসলে ট্রাম্পের সমঝোতা করার মানসিকতা তৈরি করতে চান। তবে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় থাকতে চান না তিনি।
এর আগে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শপথ অনুষ্ঠানে চীনের পক্ষ থেকে কাই কিউইর উপস্থিতি আশা করছিলেন ট্রাম্পের কয়েকজন উপদেষ্টা। সির ডান হাত হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত কাই কিউই। ৬৬ বছর বয়সী এ নেতা কমিউনিস্ট পার্টির সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আছেন। এই কমিটি চীনের মন্ত্রিসভার সমতুল্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প শিবিরের এক ব্যক্তির বরাতে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, অনুষ্ঠানে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে শুধু হান বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর পর্যায়ের কেউ উপস্থিত হলে ট্রাম্প ‘অখুশি’ হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প শিবিরের এক ব্যক্তির বরাতে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, অনুষ্ঠানে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে শুধু হান বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর পর্যায়ের কেউ উপস্থিত হলে ট্রাম্প ‘অখুশি’ হবেন। বিবিসি এমন বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
তবে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কার্নেগি চায়নার নন–রেসিডেন্ট স্কলার চং জা-ইয়ান মনে করেন, ৭০ বছর বয়সী হান ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীন সরকারের অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ এক ভূমিকায় আছেন। ট্রাম্পের প্রতি সৌজন্য দেখাতেই তাঁকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন হান। পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সাত সদস্যের পরই তাঁর স্থান। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের ৮ নম্বর শীর্ষস্থানীয় নেতা তিনি। হান ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন।
বিবিসি