চিরাচরিতভাবে এতদিন ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শব্দটি লেখা হতো আনুষ্ঠানিকভাবে। তবে এই প্রথম ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ শব্দটি ব্যবহার করা হলো। জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে এই শব্দটি লেখা হয়েছে।
একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক মঞ্চের আয়োজক দেশ ভারতের নতুন এই নামকরণ নিয়ে দেশটিতে বেশ হৈচৈ পড়ে গেছে। এটিকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কারণ এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশের নেতারা অংশ নেবেন।
৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ সমাবেশে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হচ্ছে নিমন্ত্রিতদের কাছে। সেই আমন্ত্রণপত্র ঘিরেই তোলপাড় পড়ে গেছে ভারতে। কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনো চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিতভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি-২০ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা এমন বদলের কারণ কি? এই বিষয় নিয়েই বিজেপিকে তুমুল আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) রমেশ লিখেছেন, ‘তাহলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি-২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’, অথচ চিরাচরিতভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হয়ে থাকে।’
কংগ্রেসের এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। তাহলো- সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে সব ভাষাতেই ভারত করার প্রস্তাব আনতে চলেছে মোদী সরকার? বিশেষ অধিবেশন কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছেই। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের উদ্দেশ্য কী? তা নিয়েও জল্পনা ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে।
অনেকের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকেরই আবার দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি-২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকারের মুখে কুলুপ।
প্রসঙ্গত, বিজেপিবিরোধী দলগুলো যে জোট করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপিবিরোধী দল রয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোট মোদীর বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধী নেতাদের। এ নিয়ে চুপ নেই বিজেপিও। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিকবার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির বড় বড় নেতারাও। এবার কি সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদী সরকার?