৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের শেষ সময়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রিলিমিনারির আগে শেষ মুহূর্তে কীভাবে প্রস্তুতি নিলে সফল হওয়া যাবে, অভিজ্ঞতা থেকে সেসব পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ-আল-মামুন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) তথ্যমতে, ৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার জন। প্রার্থীর সংখ্যা দেখে কিছুটা হলেও অনুমান করা যায় কতটা প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষা। বিসিএসের তিন ধাপের মধ্যে প্রিলিতে পাস করাটা কঠিন। কারণ, এখানে প্রতিযোগিতা করতে হয় কয়েক লাখ প্রার্থীর সঙ্গে। প্রিলিতে পাস করতে কৌশলী হওয়ার বিকল্প নেই। প্রায় সবাই মোটামুটি একই ধরনের প্রস্তুতি নেন। যে কয়েক হাজার প্রার্থী নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে পড়াশোনা করেন, তাঁরাই এগিয়ে থাকেন।
বিসিএসের সিলেবাস অনুসারে ২০০ নম্বরের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ৩৫ নম্বর, ইংরেজি ব্যাকরণ ও সাহিত্যে ৩৫ নম্বর, বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ৩০ নম্বর, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০ নম্বর, গাণিতিক যুক্তিতে ১৫ নম্বর, মানসিক দক্ষতা ১৫ নম্বর, বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৩০ নম্বর, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০ নম্বর, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে ১০ নম্বর বরাদ্দ। প্রিলিমিনারিতে বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টনে ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে শেষ সময়ে বেশি করে মডেল টেস্ট দিতে হবে। প্রিলিমিনারিতে নেগেটিভ মার্কিং গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বেশি করে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিলে ভালো প্রস্তুতি হবে। যত বেশি পরীক্ষা দেবেন, তত বেশি নিজেকে যাচাই করতে পারবেন। কৌশলগত ভুলত্রুটি নির্ধারণ করাও সহজ হবে। অনেক পরীক্ষার্থীকে দেখা যায় ভালো প্রস্ততি থাকার পরও প্রিলিতে পাস করতে পারেন না। এর মূল কারণ কৌশলগত প্রস্তুতি না থাকা।
বিসিএসের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পিএসসির প্রশ্নে নেগেটিভ মার্কিংয়ের ফাঁদ থাকে। বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী এই ফাঁদে পড়ে ফেল করেন। মনে রাখতে হবে প্রিলিতে আপনাকে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে হবে না। শুধু পাস করলেই চলবে। কোনো পরীক্ষার্থী যদি প্রিলিমিনারির পরীক্ষায় ১২৫ বা ১৩০ নম্বর নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। এরপর ঝুঁকি নিয়ে যত দাগাবেন, তত নম্বর কমার আশঙ্কা তৈরি হবে।
তাই পরীক্ষার হলে উত্তর দেওয়ার সময় গণহারে বৃত্ত ভরাট না করে, নেগেটিভ মার্কিংয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে উত্তর করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আবেগপ্রবণ হলে চলবে না। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসী ও চাপমুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্ত প্রত্যাশা অনেক সময় পরীক্ষার্থীর স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করে। তাই কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না। মনে রাখতে হবে বিসিএস হলো কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য একটি পরীক্ষা মাত্র। বিসিএসই জীবনের শেষ কথা নয়। চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা একসময় না একসময় ধরা দেবে।
পরীক্ষার আগে নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। তাই অনেক রাত পর্যন্ত পড়তে গিয়ে অসুস্থ হওয়া যাবে না। রুটিন করে পড়তে হবে। একদিন ১৫ ঘণ্টা পড়লাম আর আরেকদিন পড়ার খবর নেই, এমনটা করা যাবে না। প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করা উচিত।
এই সময় গ্রুপ স্টাডি করার জন্য বাইরে না যাওয়াই ভালো। নিজের মতো করে বাসায় শেষ সময়টা কাজে লাগান। আগের পড়াগুলো রিভিশন দেওয়া শুরু করুন। বাসায় প্রতিদিন পত্রিকা কিনে পড়ুন। আলোচিত ঘটনাগুলো আলাদা করে সাজিয়ে রাখুন। আশা করি, শেষ সময়টা এভাবে প্রস্তুতি নিলে সফলতা আসবে। সবার জন্য শুভকামনা।