প্রয়োজনে আবার দৃশ্যমান হবেন নারীরা

0
10
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীদের সংলাপে বক্তারা

‘আমি যখন আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করি, তখন দেখি সবার অভিজ্ঞতা আমার মতোই। তারা বলেন, কোনো পদ-পদবি লাগবে না, বরং মানুষ হিসেবে যেন প্রাপ্য সম্মানটুকু পেতে পারেন। কেননা, তারা পরিবার ও সমাজের সঙ্গে লড়াই করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এখনও তারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হন। বিষয়টি নিয়ে আমি নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ নিতে বললেও তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। নারী হিসেবে পুরুষ সহযোদ্ধার সমান সম্মান আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এমন একটা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, নারীদের গ্রহণযোগ্যতা আর নেই।’
গণঅভ্যুত্থানের নারীদের সংলাপে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নারীরা কোথায় গেল?’ শীর্ষক এ সংলাপ যৌথভাবে আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘লড়াকু ২৪’ এবং ‘এমপাওয়ারিং আওয়ার ফাইটস’।

আন্দোলনে শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার বলেন, ‘আমার মেয়ে আন্দোলনে যেতে চাইলে আমি বকাবকি করি। বন্ধুদের আন্দোলনে যেতে উৎসাহ দিয়েছিল সে। আন্দোলনের পক্ষে ছবি এঁকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল। তাকে চার তলায় বাসার বারান্দায় পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।’

আন্দোলনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারি বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস নিপু বলেন, ১৫ জুলাইয়ের পর সারাদেশে গ্রাফিতি কর্মসূচি গ্রহণ করলে আমি ও আমার এক বান্ধবী সিদ্ধান্ত নিই, দু’জন মিলেই আঁকব। বরিশালের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিজিবি ক্যাম্প এক জায়গায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই ক্যাম্পের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকব। আমরা রাত ৯টার দিকে সেখানে যাই। যখন তারা টহল দিত, তখন আমরা ঘাসের ওপর শুয়ে পড়তাম। তারা চলে গেলে আবার আঁকতাম। বরিশালে ১৭ জুলাই সারাদিন গুলি, টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। সন্ধ্যা নাগাদ এক ভাইকে নিয়ে আমরা এক জায়গায় আশ্রয় নিই। তাঁর পিঠে ২৩টি ছররা গুলি লাগে। কিছু না পেয়ে সেফটি পিন দিয়ে গুলি বের করি। আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়।
নিপুর আক্ষেপ, আন্দোলনে নারীরা সম্মুখ সারিতে থাকলেও ৫ আগস্টের পর তাদের অবদান ম্লান করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করলেও সব জায়গায় নারীদের সামনে রাখা হয় না। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গায় আন্দোলনের অংশ নেওয়া নারীরা নেই।

তবে স্বেচ্ছাসেবক দল ‘চব্বিশের উত্তরা’র সদস্য সামিয়া রহমান বলেন, আন্দোলনের নারীরা কোথাও হারিয়ে যাননি। যখন প্রয়োজন হবে, তখন তারা আবার দৃশ্যমান হবে।
সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে আহত দিল আফরোজ বলেন, ১৭ জুলাই আমি গায়েবানা জানাজায় যাই। কারণ, আবু সাঈদের মৃত্যুটা আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছিল। আমি নিজের সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধই করছিলাম। কারণ আমি কোনো দিন মিছিলে যাইনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পৌঁছালে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড আমার গায়ে পড়ে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক শামীমা সুলতানা বলেন, আমরা গণমাধ্যমে আন্দোলনের তথ্য নিজেদের সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নানা ধরনের বাধা এসেছিল। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে অন্য কৌশলে খবর পরিবেশন করি। এ ক্ষেত্রে আমরা গোয়েন্দা সংস্থার বাধার সম্মুখীনও হই।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, নাজিফা জান্নাত, চিকিৎসক অর্থী জুখরীফ প্রমুখ। সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্দোলনে শহীদ নারীদের ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্মান জানানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.