প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি থেকে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, সুশীলা কারকির উত্থান কীভাবে

0
28
সুশীলা কারকি

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পর দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। আর এ পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এসেছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে নেপালে গত সপ্তাহে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হন। বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন কে পি শর্মা অলি। এরপর গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি দেখিয়েছিলেন সুশীলা কারকি। এর মধ্য দিয়ে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। সুশীলা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর এটাই হয়তো তাঁর সর্বোচ্চ বিচারিক পদ হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সরকার তাঁকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণের চাপে সেই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত বাতিল হলেও হতাশ হয়ে সুশীলা কারকি নিজেই পদত্যাগ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে নেপালে গত সপ্তাহে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হন। বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন কে পি শর্মা অলি।

রয়টার্সকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে এল ভান্ডারি বলেন, ‘তাঁর (সুশীলা) বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল…কিন্তু তিনি কখনো নিজের নীতি থেকে সরেননি। নেপালের সংকট সামলানোর জন্য তিনিই জুতসই পছন্দ।’

সম্প্রতি নেপালে বিক্ষোভের মুখে কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করার পর সহিংসতা কিছুটা থেমেছে। তবে এখনো দেশটির কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। সেনারা রাস্তায় টহল দিচ্ছেন এবং জনগণের আস্থা হারানো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি বা প্রশাসনে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাঁর (সুশীলা) বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল…কিন্তু তিনি কখনো নিজের নীতি থেকে সরেননি। নেপালের সংকট সামলানোর জন্য তিনিই জুতসই পছন্দ।

—জে এল ভান্ডারি, নেপালের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দীপেন্দ্র ঝা ১০ বছর সুশীলা কারকির সঙ্গে কাজ করেছেন। রয়টার্সকে দীপেন্দ্র বলেন, ‘তিনি (সুশীলা) ভালো পছন্দ, তবে তাঁর সঙ্গে একটি ভালো দল থাকতে হবে।’

পাট চাষের জন্য পরিচিত শঙ্করপুর গ্রামে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কারকি। সাত ভাই–বোনের মধ্যে বড় তিনি। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া সুশীলা ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন।

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে শপথ পড়ান নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেল
নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে শপথ পড়ান নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেল, ফাইল ছবি: রয়টার্স

শিক্ষার্থী থাকাকালে সুশীলা কারকি নেপালি কংগ্রেস (এনসি) দলে যুক্ত ছিলেন। সে সময় রাজনীতিতে তাঁর বেশ প্রভাব ছিল। পরে ১৯৯০-এর দশকে পঞ্চায়েতব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেন সুশীলা। এ সময় তিনি কিছুদিন জেলেও ছিলেন।

পাট চাষের জন্য পরিচিত শঙ্করপুর গ্রামে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কারকি। সাত ভাই–বোনের মধ্যে বড় তিনি। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া সুশীলা ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।

২০১৬ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুশীলার ছোট বোন জুনু দাহাল বলেছিলেন, ‘শৈশব থেকেই তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখতেন এবং আমাদের স্কুলে যেতে উৎসাহ দিতেন।’

ওই বছরই সুশীলা প্রধান বিচারপতি হন।

গত বুধবার ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-নিউজ এইটিন–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুশীলা কারকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি নেপালের উন্নয়নে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের জন্য নতুন কোনো সূচনার চেষ্টা করব।’

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.