পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রচলিত সব বাজারে

0
163
পোশাক রপ্তানি কমেছে

তৈরি পোশাকের বড় সব বাজারে রপ্তানি কমেছে। হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, একক রাষ্ট্র হিসেবে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং জোটগত বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রধান এ পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম। আরেক বাজার কানাডাতেও একই চিত্র। তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের মতো আসে প্রচলিত এসব বাজার থেকে।

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়া ভাবিয়ে তুলেছে উদ্যোক্তাদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রপ্তানি খাতের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং শ্রম অধিকার রক্ষার ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা আগামী দিনে রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ।

রপ্তানি কমে আসার কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, প্রচলিত বাজারে রপ্তানি কমে আসা অবশ্যই উদ্বেগের। বড় বাজারে রপ্তানি কমে আসার কারণে চলতি অর্থবছর শেষে সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানি হয়তো ঋণাত্মক ধারায় নেমে যেতে পারে।

বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, কেবল বাংলাদেশেরই রপ্তানি কমেছে, তা নয়; ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রতিযোগী সব দেশেরই রপ্তানি কমছে। প্রধান দুই প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে আসার হার কম। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চাহিদা কমে আসা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নানা নীতির কারণে রপ্তানি কমছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ইইউতে রপ্তানি কম হয়েছে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে সেখানে রপ্তানি ৪ শতাংশের বেশি ছিল। গত তিন অর্থবছরের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়েছিল ৩৪ শতাংশ এবং এর আগের অর্থবছরে বেড়েছিল ১৪ শতাংশ। গত পাঁচ মাসে জোটের দেশগুলোতে রপ্তানি হয় ৯০৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯০৭ কোটি ডলার। মোট রপ্তানি আয়ে ইইউর অংশ ৪৯ দশমিক ৪৮ থেকে ৪৭ শতাংশে নেমেছে।

ইইউর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি। বছরে ৭০০ কোটি ডলারের মতো পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। গত পাঁচ মাসে জার্মানিতে রপ্তানি কম হয়েছে ১৫ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ২৩১ কোটি ডলারের পোশাক। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৭২ কোটি ডলার। জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে ৪১ কোটি ডলার বা সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং গবেষণা সংস্থা র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, জার্মানি অনেকটা মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য কমেছে। আমদানি-রপ্তানি সবই কমেছে। এ কারণে অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেরও পোশাক রপ্তানি কমেছে।

প্রচলিত অন্য বাজারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানি কম হয়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৩২৮ কোটি ডলারের পোশাক গেছে সে দেশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। রপ্তানি কমেছে ২০ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার। রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে মোট পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমে আসার কারণ হিসেবে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেকে বলার চেষ্টা করছেন যে রাজনৈতিক কারণে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে। তবে এখন পর্যন্ত রাজনীতি এর কারণ নয়। দেশটিতে চাহিদা কমে আসার কারণে অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেরও রপ্তানি কমেছে। অবশ্য আগামীর কথা বলা যায় না। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার মিত্রদের নিয়েই তা কার্যকর করে থাকে।

আলোচ্য পাঁচ মাসে প্রচলিত অন্য বাজার কানাডায় রপ্তানি কম হয়েছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ। ৬১ কোটি ডলারেরও কিছু কম মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ডলারের বেশি। পোশাকের মোট রপ্তানিতে এ বাজারের অংশ ৩ দশমিক ৪০ থেকে ৩ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

আবু হেনা মুহিব

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.