চট্টগ্রাম নগরে পুলিশের হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক এস এম শহীদুল্লাহর (৬৭) মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নগরের চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ আলী ও এ টি এম সোহেল রানা। আজ বৃহস্পতিবার নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদের সই করা এক আদেশে তাঁদের প্রত্যাহার করে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, ‘দুদকের সাবেক কর্মকর্তা এস এম শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে তদন্তের স্বার্থে অভিযানে থাকা দুই এএসআইকে থানা থেকে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
আদালতে করা একটি মারামারির মামলায় পরোয়ানা থাকায় গত মঙ্গলবার রাতে নগরের চান্দগাঁওয়ের বাসা থেকে শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন সাদাপোশাকে থাকা দুই এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানা। থানায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের দাবি, হৃদ্রোগের রোগী শহীদুল্লাহকে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, শহীদুল্লাহকে ওসির কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তাঁকে থানায় কোনো নির্যাতন করা হয়নি। ওসির কক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পরিবারের সদস্যরা ও পুলিশ মিলে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ।
এস এম শহীদুল্লাহর ছেলে নাফিজ শহীদ গতকাল বুধবার বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাদাপোশাকে চান্দগাঁও থানা-পুলিশের দুই এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) তাঁর বাবাকে বাসা থেকে থানায় নিয়ে যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, মারামারির একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এস এম শহীদুল্লাহ দীর্ঘদিন থেকে হৃদ্রোগে ভুগছিলেন উল্লেখ করে নাফিজ শহীদ বলেন, তাঁর বাবাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা ওষুধ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ দিতে দেয়নি।
নাফিজ শহীদের অভিযোগ, হৃদ্রোগীকে ওষুধ দিতে না দেওয়াও এক ধরনের নির্যাতন এবং পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর সাজা দাবি করেন তিনি।
যে মামলায় গ্রেপ্তার হন দুদক কর্মকর্তা
মারধরের অভিযোগ এনে দুদক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ ও তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ার বিরুদ্ধে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া (২৬) নামের এক নারী। তবে শহীদুল্লাহর স্বজনদের দাবি, রনি আক্তার তানিয়া নামের কেউ তাঁদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন না। তাঁদের দাবি, হয়রানি করতেই জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন বাদীকে দিয়ে মিথ্যা মামলাটি করেছিলেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানাটি ১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় আসে। পরদিন পরোয়ানা তামিল করতে থানার এএসআই ইউসুফ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত জানুয়ারি থেকে তিন হাজার টাকা বেতনে রনি আক্তার তানিয়া শহীদুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। প্রথম দুই মাস বেতন ঠিকমতো দিলেও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত তাঁর বেতন বকেয়া ছিল। ১২ আগস্ট বকেয়া টাকা চাইলে ওই সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন শহীদুল্লাহ। ২৩ আগস্ট রাতে বকেয়া বেতন চাইতে গেলে শহীদুল্লাহ তানিয়াকে চড়থাপ্পড় মারেন।
একপর্যায়ে তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ার তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী রনি আক্তারের মুঠোফোন থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
দুদক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ ছেলে নাফিস শহীদ বলেন, সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতিবেশীর বিরোধ রয়েছে। তাঁরা ওই নারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। এ ঘটনার জন্য তিনি তাঁদের শাস্তিও দাবি করেন।