পুতিনের ডিক্রি জারি, দুই বিদেশি কোম্পানির সম্পদ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে

0
262
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফাইল ছবি: রয়টার্স

দুটি বিদেশি জ্বালানি কোম্পানির সম্পদ সাময়িকভাবে সরকারের হাতে আনতে মঙ্গলবার ডিক্রি জারি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই দুটি কোম্পানি হলো, ইউনিপার এসই ও ফিনল্যান্ডের ফোরটুম ওওয়াইজেড। তাদের রাশিয়া শাখার সম্পদ এখন রুশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া বুঝিয়ে দিল, প্রয়োজন হলে আরও বিদেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। অন্য দেশে রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করা হলে রাশিয়া কী ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, এই ডিক্রি জারি করে রাশিয়া সেটাই জানান দিল।

ডিক্রিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে। সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়াকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। পশ্চিমাদের গৃহীত ব্যবস্থাকে অবন্ধুসুলভ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ডিক্রিতে।

ডিক্রির ভাষ্য অনুযায়ী, এই দুটি কোম্পানির শেয়ার এখন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা রসিমুশচেসতভোর হাতে।

ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেন, ইউক্রেনের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে যে ক্ষয়ক্ষতি রাশিয়া করেছে, সেই মূল্য তাকে চোকাতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার যেসব মূল্যবান সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, সেগুলো বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আইনি বাধা আছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভিটিবির প্রধান নির্বাহী গত সোমবার বলেছেন, ফোরটুমের মতো বিদেশি কোম্পানির সম্পদ সরকারের হাতে নেওয়া এবং তা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি রাশিয়াকে বিবেচনা করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেই কেবল তা ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।

এদিকে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টিএএসএসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, আরও বিদেশি কোম্পানির সম্পদ রসিমুশচেসতভোর হাতে আসতে পারে। তারাই ঠিক করবে, সেই সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করা হবে; অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে তারা সেটা করবে।

টিএএসএস রসিমুশচেসতভোর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে এভাবে—এই ডিক্রির সঙ্গে মালিকানার সম্পর্ক নেই; মালিকেরা যে মালিকানা হারাচ্ছেন, তা নয়। এই নিয়ন্ত্রণ সাময়িক প্রকৃতির, যার অর্থ হলো, প্রকৃত মালিকের সম্পদ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার না থাকা।

এদিকে গত মাসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের চিন্তা করছে।

পক্ষান্তরে, রাশিয়ায় থাকা অবন্ধুসুলভ দেশগুলোর মালিকানাধীন কোম্পানিগুলার সম্পদ বিক্রিতে সরকারি কমিশন এবং ক্ষেত্রে বিশেষে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগে।

ইউনিপার অবশ্য আগেই বুঝতে পেরেছিল, সে দেশে থাকা তাদের সম্পদ রাশিয়ার ক্রেতার কাছে বিক্রির চেষ্টা সফল হবে না। সে জন্য তারা সম্পদের প্রতীকী মূল্যায়ন করেছিল এক ইউরো। ফোরটুম শেয়ারহোল্ডারদের সতর্ক করে দিয়েছে, রাশিয়ায় থাকা কোম্পানির সম্পদ তাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকার ঝুঁকি আছে।

এদিকে পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল বিক্রি অব্যাহত আছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ইনস্টিটিউটের (আইইএ) তথ্যানুসারে, রাশিয়ার মাসিক তেল বিক্রির পরিমাণ ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, মার্চে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রির পরিমাণ গত বছরের এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। মার্চে রাশিয়ার দৈনিক তেল ও তেলজাতীয় পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছয় লাখ ব্যারেল বেড়েছে। এতে গত মাসে তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রি করে রাশিয়ার আয় হয়েছে প্রায় ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলার।

তবে তেল বিক্রি বাবদ রাশিয়ার আয় গত বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কম। এর কারণ, ইউরোপীয়রা রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দেশটির তেল ক্রেতার সংখ্যা এখন অনেক সীমিত। পশ্চিমা বিধিনিষেধের কারণে ক্রেতারা অনেক দর-কষাকষির সুযোগ পাচ্ছেন, ছাড় আদায় করতে পারছেন। জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.