পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভালো’ শুল্কছাড়ের আশায় বাংলাদেশ

0
23
টাকা
  • ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
  • যুক্তরাজ্য, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোগত চুক্তির ঘোষণা এসেছে।
  • যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তির কাছাকাছি চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তির আলোচনায় নতুন জটিলতাও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পাল্টা শুল্কের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠক হতে পারে ৯ জুলাই। বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বৈঠকটিতে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে গতকাল (৩ জুলাই) একটা বৈঠক করেছি। আমরা এখনো আশা করছি, ভালো একটা শুল্কছাড় পাব। আমাদের দিক থেকে কাঠামোগত ও শুল্কগতভাবে যত কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব, অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘৯ জুলাই আরেকটি বৈঠক আছে। ভালো ফল পাব আশা করছি। ৩ জুলাইয়ের বৈঠকে ইউএসটিআর আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকব না।’

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ। শুল্ক আরোপের কার্যকরের তারিখ ছিল গত ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কহারের ঘোষণাও তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে ৯ জুলাই।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তারা জোর আলোচনা চালাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ছাড়ও দিচ্ছে, যাতে চুক্তি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গত মাসেই বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেয়। ৮ মে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে একে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিবিসির খবর অনুযায়ী, গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই চুক্তি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও চীন ‘জেনেভা চুক্তি’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অতিরিক্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে। মে মাসে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বাণিজ্যযুদ্ধের বিরতি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা হয়, তিনি মূলত সেই প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন। সেখানে দুই দেশ সাময়িক বাণিজ্যযুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হয়।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মূলত চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি দ্রুত পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া নিয়ে এই সমঝোতা। চুক্তিটি জেনেভা চুক্তির ধারাবাহিকতা। জেনেভায় উভয় পক্ষই একমত হয়েছিল, পরস্পরের পণ্যে আরোপিত শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হবে। লক্ষ্য ছিল, দ্রুতই বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানো। পরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় চূড়ান্ত চুক্তির কাঠামো নির্ধারিত হয় এবং ট্রাম্প যে চুক্তির কথা বলেছেন, সেটি সম্ভবত সেই কাঠামোর আনুষ্ঠানিক রূপ। পূর্ণাঙ্গ চুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগস্ট মাস।

এদিকে গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন থেকে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ঘোষিত পাল্টা শুল্কনীতির আওতায় এসব পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, যদি অন্য কোনো দেশ তাদের পণ্য ভিয়েতনামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাহলে সেসব পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। তবে নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না। তবে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে কি না বা ভিয়েতনাম এই শর্তে রাজি হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ভিয়েতনাম নিউজ জানিয়েছে, দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। যদিও তিনি এই বিষয়কে ‘কাঠামোগত চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইউরোপীয় কমিশনার মারোস সেফচোভিচ ১ জুলাই আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে গেছেন। মার্কিন খসড়া প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে নিয়েছে ইইউ। তবে তারা স্পষ্ট করেছে, সামাজিক মাধ্যম ও প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর ইউরোপের কঠোর নিয়ন্ত্রণের নীতি এই আলোচনার আওতায় আসবে না।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ইউরোপ ১০ শতাংশ হারে অভিন্ন শুল্ক চায়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ওষুধ, মদ, সেমিকন্ডাক্টর ও বিমান খাতে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিক, সেটাও তারা চায়। তারা গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক ছাড় চায়।

ইকোনমিক টাইমস-এর এক খবর অনুযায়ী, শুরুতে আশাবাদ থাকলেও অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে অভিযোগ, ভারত এখনো কৃষিপণ্য, ইস্পাত ও গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে না। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আরও আলোচনায় রাজি। মূল বিরোধ দুধ, বাদাম, সয়াবিনসহ কৃষিপণ্যে ভারত কতটা ছাড় দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ইস্পাত ও গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক কমাবে কি না, তা নিয়ে। ভারতের আশা ছিল, ৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি হয়ে যাবে; কিন্তু এখন তা নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ কী করছে

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা আছে বলে এর আগে জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, তুলা ও গম কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ইউএসটিআরের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, আলোচনা ইতিবাচকভাবেই এগোচ্ছে। চুক্তি এখনই করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকার মেয়াদ বাড়তে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.