পারাপারে ভরসা সাঁকো, বেইলি সেতু হচ্ছে না

0
209
করতোয়া নদীর ওপর শাহ ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পথচারী চলাচলের জন্য পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায়

সাঁকো থেকে নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়লে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

বগুড়ায় শাহ ফতেহ আলী সেতুর নির্মাণকাজ চলাকালীন করতোয়া নদী পারাপারে বিকল্প বেইলি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। শুধু পথচারী পারাপারে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকো থেকে নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়লে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

বগুড়ার গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার লোকজন ছাড়াও বগুড়া পৌরসভার চেলোপাড়া, নারুলী, কইপাড়া, নাটাইপাড়া, সাবগ্রাম, আকাশতারাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ফতেহ আলী সেতু পারাপার হয়ে বাজার, কেনাকাটা, স্কুল-কলেজ ছাড়াও দাপ্তরিক কাজে বগুড়া শহরে যাতায়াত করেন। গাবতলী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা খেতের সবজি নিয়ে প্রতিদিন সকালে নদী পারাপার হয়ে রাজাবাজারে আড়তে তা বিক্রি করেন।

নদীর পূর্ব পারের চাষিবাজারের আড়তে প্রতিদিন ভোরে মাছের পাইকারি বাজার বসে। কোটি টাকার মাছ বেচাবিক্রি হয় এই বাজারে। পশ্চিম পারের ফতেহ আলী বাজার, বকশীবাজার, খান্দার বাজার, কলোনি বাজার, নামাজগড় বাজার, কালীতলা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা চাষিবাজার থেকে পাইকারি মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। তবে নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ২২ মে থেকে ফতেহ আলী সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। এতে দুই পারের মানুষজনকে দীর্ঘ পথ ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না করে মূল সেতু ভেঙে ফেলায় মানুষের দুর্ভোগ শুরু হয়। এ বিষয়ে ২৬ মে ‘বগুড়ার ফতেহ আলী সেতু: চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করেই কাজ শুরু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর পথচারী পারাপারে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। শাহ ফতেহ আলী সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন শহরে রিকশা চালান নারুলী এলাকার বাবর আলী (৫৫)। তিনি বলেন, ‘লিত্তি বিয়ানবেলা গ্যারেজত থ্যাকে রিসকা লিয়ে শহরত খ্যাপ মারি। ভাঙা বিরিজের ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ। ম্যালা দূর দিয়ে ঘুরে খ্যাপ মারা লাগিচ্চে। রিসকাত যাত্রি মিলিচ্চে না। কামাই হচ্চে না। লদী পারাপারের ব্যবস্থা না করে বিরিজ ভাঙে হামাকেরে প্যাটত লাত্তি মারচে?’

চেলোপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বলেন, ‘শাহ ফতেহ আলী সেতু পারাপার হয়ে পূর্ব পারে চেলোপাড়ায় ব্যবসা করি। সেতু ভাঙার পর নদী পারাপারে একটা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোয় উঠলে বুক ধড়ফড় করে।’

সওজের বগুড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে শাহ ফতেহ আলী সেতুকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পাটাতন ও গার্ডারের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। সেতু পুনর্নির্মাণে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই সেতুর দুই পাশে সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণে আরও ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। মেসার্স জামিল ইকবাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫ মে কার্যাদেশ পেয়ে পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

সওজের বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ফতেহ আলী সেতুর পাশে বেইলি ব্রিজ করার মতো কোনো জায়গা নেই। অর্থসংকটও আছে। শুধু হেঁটে নদী পারাপারের জন্য ঝুলন্ত বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষায় ঝুঁকি বাড়লে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.