দেশের রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযানের নামে সরকারি নানা সংস্থা হয়রানি করছে। কোনো বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ লোক ছাড়াই যে সংস্থা যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতি করছে। পান থেকে চুন খসলেই অস্বাভাবিক শাস্তি দিচ্ছে। এতে ব্যবসার চরম ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। ‘দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি, রমজানে রেস্তোরাঁয় ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা এবং সরকারি সংস্থার অভিযানের হয়রানি’ বন্ধে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
সমিতির সভাপতি হাজী মো. ওসমান গনির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি এম এস আলম শাহজাহান ও রেজাউল করিম সরকার রবিন, প্রথম যুগ্ম মহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান চৌদুরী, বিপু, কোষাদক্ষ তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতা। সরকারের ১২টি অধিদপ্তর রেস্তোরাঁগুলোকে তদারকি করছে। বহু বছর ধরে যেকোনো একটি অধিদপ্তরের অধীনে রেস্তোরাঁ খাতকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন রেস্তোরাঁ মালিকেরা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে এ খাতের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। কারণ এ খাতের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ ও অশিক্ষিত। এছাড়া নির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন নেই। কিন্তু এতে কেউ কর্ণপাত করছে না।
রেস্তোরাঁ খাতকে একটি সংস্থার অধীনে নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, এভাবে বিচ্ছিন্ন অভিযানে কখনোই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ভয় পাচ্ছেন। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে রেস্তোরাঁ মালিকদের উপর বিশাল খড়গ নেমে আসতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান আরও বলেন, বর্তমানে রেস্তোরাঁ খাতে এসি ও নন এসি রেস্তোরাঁয় ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স রয়েছে। তবে আগামী বাজেটে নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ (বাংলা খাবার) ও স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৩ শতাংশ করতে হবে। ভ্যাটের সাথে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর দেওয়ার প্রস্তাবও করেন তিনি।
রেস্তোরাঁয় শতভাগ গ্যাস সরবরাহ করা হয় না দাবি করে ইমরান বলেন, ৪০ শতাংশ গ্যাস দিয়ে ১০০ শতাংশ গ্যাসের বিল নেওয়া হচ্ছে। তাই রেস্তোরাঁয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান হাসান বলেন, দেশের বড় ৫টি কোম্পানি বেকারি ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। এখন তারা বিরিয়ানির ব্যবসাও নিয়ে যেতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রেস্তোরাঁ সুনাম ক্ষুণ্ন করে ব্যবসাটি নিজেদের কবজায় নিতে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে। দেশে ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। গত ১০ বছরে রেস্তোরাঁ ব্যবসা ৮ গুণ বেড়েছে। আগামী ১০ বছর পর এটি ৩০ গুণ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া আরও কয়েটি দাবি জানায় সমিতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্ট চলছে। এসব মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে। তবে মোবাইল কোর্ট যৌক্তিকভাবে করতে হব। জামিন অযোগ্য আইনের ধারা বাতিল করতে হবে। করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁকে সরকারি সহযোগিতা দিতে হবে। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নেতিবাচক প্রচারণায় রেস্তোরাঁ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট কাটাতে প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা দাবি করেছেন রেস্তোরাঁ মালিকেরা।