প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি কিংবা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নন, পাকিস্তানে এই সময়ে সবচেয়ে বড় ‘ভিআইপি’র নাম ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ। ৫৭ বছর বয়সী ‘হাফেজে কোরআন’ এই সেনা কর্মকর্তা চার তারকা জেনারেল থেকে পাঁচ তারকা ফিল্ড মার্শাল, সেনাপ্রধান থেকে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ বা (সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান) হয়েছেন। ধাপে ধাপে উঠে এখন তিনি পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে কার্যত আইনের ঊর্ধ্বে থাকা একজন ব্যক্তি।
আসিম মুনির একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘প্রিয় বন্ধু’, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘আয়রন ব্রাদার’। উল্টো দিকে ভারতের মতে, ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’ এবং আফগান তালেবানের দৃষ্টিতে ‘এক নম্বর শত্রু’।
বর্তমানে পাকিস্তানের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পারমাণবিক কমান্ড—সবই আসিম মুনিরের হাতে। সব মিলিয়ে নতুন একধরনের সামরিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন আসিম মুনির, যাকে অনেকেই বলছেন ‘মুনিরবাদ’।
যে পথে তিনি এলেন
১৯৬৮ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে আসিম মুনিরের জন্ম। তাঁর পরিবার ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে পাকিস্তানে আসে। প্রথমে তারা টোবা টেক সিংয়ে বসবাস করে, পরে রাওয়ালপিন্ডির ধেরি হাসানাবাদে স্থায়ী হয়।
ছোটবেলায় আসিম মুনির গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে জীবন ছিল সহজ কিন্তু শৃঙ্খলাবদ্ধ। স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ছিল দারুণ আকর্ষণ। ফাস্ট বোলিংয়ে তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়, যা তাঁর শারীরিক সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পরিচয় দেয়। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল তীব্র।
আসিম মুনিরের বাবা সৈয়দ সরওয়ার মুনির ছিলেন রাওয়ালপিন্ডির এফজি টেকনিক্যাল হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল এবং একজন ইমাম। তাঁর বাবার ধর্মীয় ও শিক্ষকতার ভূমিকা পরিবারে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নৈতিক পরিবেশ তৈরি করে। মা সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। সৈয়দ বংশের এই পরিবারে ইসলামি মূল্যবোধ ছিল গভীরভাবে প্রোথিত।
আসিম মুনিরের স্ত্রী সৈয়দা ইরুম আসিম এবং তাঁদের তিন সন্তান রয়েছেন। তাঁরা রাওয়ালপিন্ডিতে থাকেন। তবে তাঁদের জীবন প্রকাশ্যে আসে না। এ বছরের আগস্টে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছিল; কিন্তু এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
আসিম মুনির প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির মারকাজ মাদ্রাসা দারুল তাওহিদে ধর্মীয় পরিবেশে। পরবর্তী সময়ে তিনি অ্যাবোটাবাদের পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শৈশবেই পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করা মুনিরের ব্যক্তিগত পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মঙ্গলা মিলিটারি কলেজে পড়ার সময় আসিম মুনির হিফজ সম্পন্ন করেন। আইএসপিআর ও অফিশিয়াল জীবনীতে এটি বিশেষভাবে উল্লেখিত। ফিল্ড মার্শাল হওয়ার পর পাকিস্তানের মূলধারা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই পরিচয় আরও জোরালোভাবে উপস্থিত হয়েছে। আসিম মুনির সামরিক একাডেমিতে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন।

যেভাবে সেনাপ্রধান আসিম মুনির
২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এ জন্য তিনি দায়ী করেন রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রকে। তখনকার সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।
ইমরান খানের এ বক্তব্য দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। একের পর এক মামলা দেওয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সেই মামলায় এখন কারাগারে আছেন একসময়ের চৌকস ক্রিকেট তারকা ইমরান খান।
বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সেনাপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তালিকায় ছিলেন ছয়জন। তাঁদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বেছে নেন আসিম মুনিরকে। লক্ষণীয় হলো, আসিম মুনিরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ আগ্রহ ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সচরাচর অতীতে যা দেখা যায়নি। এটা ছিল মূলত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে ইমরানের মন্তব্যের ধারাবাহিকতা।
২০২২ সালে আসিম মুনির আইএসআই প্রধান থেকে পাকিস্তানের ১১তম সেনাপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি পান।
এরপর ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংঘাত ঘটে, যা পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ নামে অভিহিত করে। ভারত যে অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই সংঘাতের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই, গত ২০ মে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পর পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত করা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আসিম মুনির মনে করেন, পেহেলগামকাণ্ডকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ট্রাম্পের দূতিয়ালির মাধ্যমে থামলেও এতে তাঁর দেশ বিজয়ী হয়েছে। এই সাফল্যের জন্য তাঁর ফিল্ড মার্শাল পদ পাওয়া উচিত। তিনি যেমন ইচ্ছা করেছেন, তেমনই হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান চাইলে পাকিস্তানে যেকোনো কিছু হওয়া সম্ভব।
আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন, যা ছিল একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
ফিল্ড মার্শাল একটি পাঁচ তারকা সামরিক পদমর্যাদা। এটি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ। এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং বিরল পদ, যা সাধারণত ব্যতিক্রমী সামরিক অবদানের জন্য দেওয়া হয়। পদটি জেনারেলের চেয়েও উচ্চতর এবং এটি একটি আনুষ্ঠানিক বা যুদ্ধকালীন পদমর্যাদা হিসেবে বিবেচিত হয়, নিয়মিত সেনাকাঠামোতে এটি খুব কম ব্যবহৃত হয়।
সংবিধান সংশোধন: কী বদলে গেল
আসিম মুনির এখন অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। ১২ নভেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে সংবিধানের ২৪৩ নম্বর ধারা সংশোধনী ২৩৪-৪ ভোটে পাস হয়। পরদিনই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি তাতে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে এটি আইনে পরিণত হয়।
নজিরবিহীন দ্রুততায় সংবিধানের এই সর্বশেষ সংশোধনীর ফলে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মুনির এখন পাকিস্তানের নৌ ও বিমানবাহিনীরও তত্ত্বাবধান করবেন।
সংবিধানে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার প্রধানের মাথার ওপর কোনো পদের অস্তিত্ব এত দিন ছিল না। মুনিরের জন্য বিশেষভাবে পদটি তৈরি করা হয়েছে।
সংবিধানের ওই সংশোধনী বিলে মুনিরের জন্য বিশেষ আইনি রক্ষাকবচের বন্দোবস্ত করেছে শাহবাজ শরিফের সরকার। পাকিস্তান সেনা সর্বাধিনায়কের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা করা যাবে না।
মুনিরের ফিল্ড মার্শাল পদবি ও পোশাক আজীবনের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অবসর গ্রহণের পরও তাঁকে ‘দায়িত্ব এবং কাজ’ দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে তিনি আজীবন জনপরিসরে কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন। অনেকেই এটিকে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হিসেবে দেখছেন।
সাংবাদিক ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সহসভাপতি মুনিজা জাহাঙ্গীর মনে করছেন, ‘আবার ক্ষমতার ভারসাম্যকে সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকিয়ে দেওয়া হলো এবং এমন এক সময়ে তাদেরকে আরও ক্ষমতায়িত করা হলো, যখন কিনা সেনাবাহিনীতে লাগাম টানার প্রয়োজন ছিল।’
পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সেনাবাহিনী। কখনো কখনো তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে, আবার অনেক সময় পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নেড়েছে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে, জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এবং জেনারেল জিয়াউল হকের মতো সামরিক নেতাদের প্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশটি একাধিকবার দোদুল্যমান পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার এই ভারসাম্যকে হাইব্রিড শাসন হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকেরা। সংবিধানের নতুন সংশোধনীকে এখন সেই ভারসাম্য পরিবর্তন হয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে ঝুঁকে পড়া হিসেবে দেখছেন অনেকে।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমার কাছে, এই সংশোধনীটি সর্বশেষ ইঙ্গিত, সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী।’ তাঁর মতে, ‘পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড সিস্টেম নয়, বরং একটি পোস্ট-হাইব্রিড সিস্টেমের অভিজ্ঞতা লাভ করছে।’

কেন ট্রাম্প মুনিরকে এত গুরুত্ব দেন
২০২৫ সালের ১৮ জুন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মুনিরকে ওভাল অফিসে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান। এটি ছিল প্রথমবারের মতো একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে বেসামরিক নেতাদের ছাড়াই এমনভাবে স্বাগত জানানোর ঘটনা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনায় উঠে আসে ইরান, চীন ও সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বয়ের বিষয়।
ট্রাম্প পরবর্তী সময়ে বলেন, ‘মুনিরের সঙ্গে দেখা করা আমার জন্য সম্মানের বিষয়’ এবং ‘আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি।’
মুনির ট্রাম্পের কাছে কৌশলগত সহযোগিতার প্রতীক। আইসিসকে (ইসলামিক স্টেট, খোরাসান প্রদেশ, এটি মূলত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয়) নেতাদের গ্রেপ্তার, আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন ফ্লাইটের অনুমোদন এবং ইরানবিরোধী গোপন সমন্বয়—এসবকে ওয়াশিংটন মুনিরের ‘উপহার’ হিসেবে দেখে।
বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান পাচ্ছে উন্নত অস্ত্র, বিনিয়োগ এবং ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপের সুবিধা। এই সম্পর্কের কারণে মুনিরকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং কার্যকর সামরিক অংশীদার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শেষে আবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় আসিম মুনিরের। সে সময় অবশ্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও ছিলেন। বৈঠকের এক নতুন ছবিতে দেখা যায়, মুনির একটি খোলা কাঠের বাক্সে রাখা বিরল খনিজ পদার্থ ট্রাম্পকে দেখাচ্ছেন। পাশে সামান্য হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন শাহবাজ শরিফ।
বৈঠকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও উপস্থিত ছিলেন। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এই আলোচনা। বৈঠকে এই ফিল্ড মার্শাল ভারতের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, সিন্ধু নদীতে বাঁধ নির্মাণ করলে পাকিস্তান কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দেশকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শেষ দুর্গ’ বলে অভিহিত করেন।
চীনের সঙ্গে কেন এত ঘনিষ্ঠতা
ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ২০২৫ সালে পদোন্নতির পর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জুলাই মাসে তিনি প্রথমবার চীন সফরে যান এবং সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জেং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল জাং ইউক্সিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে মূল আলোচনার বিষয় ছিল সিপিইসির নিরাপত্তা, ফ্রি ট্রেড চুক্তি এবং চীনা কর্মীদের সুরক্ষা।
সিপিইসি বা চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর হলো চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিশাল অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রকল্প। এটি মূলত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআইয়ের অংশ এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আসিম মুনিরের সময়ে চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় হয়েছে। পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ এবং ২০২৫ সালের সংঘাতে রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্স সমর্থন দেওয়ার দায়িত্বও মুনিরের তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি পিএলএর (পিপলস লিবারেশন আর্মি) বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের অটুট অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও মুনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। আগস্টে ইসলামাবাদে ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে তিনি চীনকে আশ্বাস দেন, পাকিস্তান সিপিইসির নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সেপ্টেম্বরের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন আসিম মুনির। ফলে চীনের সঙ্গে মুনিরের সম্পর্ককে পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ, বিশ্বাসযোগ্য এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখাচ্ছে।

ইমরান খানকে নিয়ে অবস্থান
আসিম মুনির ও ইমরান খানের সম্পর্ক উত্তপ্ত। ইমরান খান, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে কারাগারে। তিনি মুনিরের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতির অভিযোগ তুলেছেন। ইমরান খান বলেছেন, মুনির তাঁর ও স্ত্রী বুশরা বিবির ওপর মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। পিটিআই কর্মীদের ওপরও অত্যাচার করছেন।
আসিম মুনিরের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু
ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের হাতে এখন পাকিস্তানের সামরিক, কৌশলগত ও সংবিধানগত প্রভাবের সব চাবিকাঠি। ২৭তম সংবিধান সংশোধনী তাঁকে কার্যত আজীবনের ক্ষমতা দিয়েছে এবং সংসদের তিন-চতুর্থাংশ ভোট ছাড়া তাঁকে অপসারণ করা প্রায় অসম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে আসিম মুনিরের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক মেজাজের ওপর। যদি মুনির শান্তি বজায় রাখেন, তবে তিনি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি ইতিবাচক চরিত্র হিসেবে পরিগণিত হবেন। অন্যদিকে যদি তিনি সংঘাতের পথে হাঁটেন, তাহলে ২০২৫ সালের চার দিনের যুদ্ধ কেবল প্রারম্ভিক ট্রেলার হিসেবে মনে হবে।
ইমরান খান কারাগারে, শাহবাজ শরিফের সরকার কার্যত সেনা নিয়ন্ত্রিত, বিচার বিভাগ নতুন ‘কনস্টিটিউশনাল কোর্টে’ রূপান্তরিত এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত। এই প্রেক্ষাপটে, আসিম মুনিরের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের গুরুত্ব দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলবে।
ই–মেইল: alim.zaman@prothomalo.com
কাজী আলিম-উজ-জামান

















