পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থার বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে বাড়ানো হবে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক ও কারিগরি সক্ষমতা।
দূষণ হ্রাস করে পরিবেশ এবং এ-সম্পর্কিত বিধিবিধানে উন্নতি আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু খাতে বাড়ানো হবে সবুজ বা পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গঠন করা হবে একটি গ্রিন ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, প্রকল্পটির আওতায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চারটি যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে ৪৬ হাজার গাড়ি পরীক্ষা করা যাবে।
এ ছাড়া ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রও তৈরি করা হবে। এর আওতায় আসবে বছরে সাড়ে ৩ হাজার টন ই-বর্জ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু উৎস থেকে ১০ লাখ টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো ঢাকায় নদীর উপরিভাগের পানির মান সার্বক্ষণিক পরীক্ষার জন্য ২২টি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। বিভিন্ন স্থানে শিল্প বর্জ্য শোধনাগার প্লান্ট (ইটিপি) পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও থাকবে এতে। বিশ্বব্যাংক আশা করছে, প্রকল্পটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমবে। উপকৃত হবে বৃহত্তর ঢাকা এবং অন্যান্য এলাকার ২ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জিয়াং রু বলেন, ঢাকায় উচ্চমাত্রায় বায়ুদূষণ নিয়ে প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয়েছে তার প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগের জন্য দায়ী ছিল বায়ু ও সিসাদূষণ। এই দূষণে ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) প্রায় ১২ শতাংশ। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সফট লোন উইন্ডোখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) মাধ্যমে বাংলাদেশকে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ঋণ পরিশোধে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ।
দরিদ্র দেশের ওপর বেড়েছে ঋণের বোঝা :এদিকে গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এক সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, এ বছর বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এটি গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। এ ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই চীন জোগান দিয়েছে। বড় অঙ্কের এই ঋণের সুদহারও অনেক বেশি। এই ঋণ যেসব দেশ নিয়েছে, বেশিরভাগেরই কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য নেই।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে অনেক দরিদ্র দেশ ঋণখেলাপি হয়ে পড়বে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। অন্যদিকে, ঋণ ও অর্থ সহায়তা বন্ধ হলে এসব দেশে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল চীনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।