চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করবে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আরএসজিটিআইর মধ্যে একটি কনসেশন চুক্তি সই হয়েছে। ২২ বছরের জন্য এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।
১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ টার্মিনালের মাধ্যমে টুল পোর্ট থেকে ল্যান্ড লর্ড মডেলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা। টুল পোর্ট পদ্ধতিতে বন্দর পরিচালনার যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সরকার। আর ল্যান্ড লর্ড পদ্ধতিতে সরকার কেবল প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরি করে। বাকি সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বেসরকারি খাত।
৫৮৪ মিটার লম্বা পিসিটি টার্মিনালের তিনটি জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কন্টেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তেল খালাসের জন্য রয়েছে ২০৪ মিটার লম্বা আরেকটি ডলফিন জেটি। এ টার্মিনাল বছরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রায় পাঁচ লাখ কন্টেইনার বাড়তি হ্যান্ডেল করতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। কমবে জাহাজের চাপও।
গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আরএসজিটিআইর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিসিটি টার্মিনাল বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে। আরএসজিটিআই যে সুনামের সঙ্গে জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনা করছে, সে দক্ষতা ও প্রযুক্তিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে বলে আমি আশা করি। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পিপিপি অ্যাক্ট অনুযায়ী জিটুজি পদ্ধতিতে চুক্তি হয়েছে সৌদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। রেড সি গেটওয়ে তাদের প্রস্তাবে বলেছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪ কোটি ইউএস ডলার বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, প্রায় ২৬ একর জায়গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চারটিতে। আর জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১-এ। পিসিটিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
পিসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো টার্মিনাল তৈরিও করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পূর্ত কাজের দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের। পূর্ত কাজে নিয়োগ দেওয়া হয় দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। জেটি নির্মাণে ই-ইঞ্জিনিয়ারিংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ইয়ার্ডসহ অন্যান্য কাজেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। টার্মিনাল নির্মাণের চূড়ান্ত নকশা ও পরামর্শক ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, বিদেশিদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো দুটি বিষয় আমলে নেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য, অন্যটি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেও এ ক্ষেত্রে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘বর্তমানে কেবল দেশীয় প্রতিষ্ঠান টার্মিনাল পরিচালনা করছে। তারা ইচ্ছা অনুযায়ী চার্জ আদায় করছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।’
পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিদর্শন
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী এবং রেড সি গেটওয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর বিশেষ বিমানে তারা বন্দরনগরীতে নেমে সরাসরি পতেঙ্গা টার্মিনালে যান।
সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠক
বাংলাদেশের জ্বালানি, লজিস্টিকস, উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আয়াদ আল আমরি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা ইউসেফ ইশা আল-দুহাইলান প্রমুখ।