পণ্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে (বিওপি) উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস, অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল শেষে বিওপির ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ডলার। তার এক মাস আগে এই ঘাটতি ছিল ১০৭ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরে এপ্রিল শেষে বিওপির ঘাটতি ছিল ৫৫৭ কোটি ডলার। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ডলার।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে বিওপির ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় বিওপির ঘাটতি কমে আসতে থাকে। তাতে রিজার্ভ পতন থামে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের এই সময়ে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪২২ কোটি ডলার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী গত ২৯ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার ডলার। গত বছর একই সময়ে বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। তার মানে, এক বছরে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বেড়েছে ১৮৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়। তার আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) ঘাটতি ছিল আরও বেশি, ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। অবশ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে ১৩৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি কিছুটা বাড়লেও পণ্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ঘাটতি কমে এসেছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়। যদিও ১০ মাস শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত আছে ১৯৬ কোটি ডলার।
দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। অন্যদিকে এপ্রিলের পর মে মাসেও রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসীরা আয় এসেছে। এর মধ্যে গত মাসে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। মূলত সরবরাহ ভালো থাকায় তা স্থিতিশীল রয়েছে।