
জরুরি ত্রাণসহায়তা নিয়ে গাজা অভিমুখে যাওয়ার পথে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র গ্রেপ্তার করা ক্রু এবং নৌবহরটিতে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনে জাতিগত হত্যার দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম খান এ দাবি জানান।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
সমাবেশে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিষ্ঠুর ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক গণহত্যা পরিচালনা করছে। নারী, শিশুসহ ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। জামায়াত এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
সারা দুনিয়া ইসরায়েলের জাতি হত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে দাবি করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রাণবাহী জাহাজে নৃশংসভাবে হামলা করা হয়েছে। ৫০০–এর বেশি মানবাধিকারকর্মী ও ত্রাণবাহী নৌবহরটির ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বমোড়লখ্যাত একটি দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে, সহযোগিতা করে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘ইহুদিরা জানে না, মুসলিম জাতি শহীদ হতে জানে, পরাজয় মানতে জানে না। শহীদদের রক্তের বিনিময়েই ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।’

জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অবিলম্বে ইসরায়েলের হাতকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে। ফিলিস্তিনের যে অংশ ইসরায়েল দখল করেছে, সেটি মুক্ত করতে হবে। ত্রাণবাহী জাহাজের কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। যত দিন ফিলিস্তিন স্বাধীন না হবে, তত দিন মুসলমানদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। কোনো পরাশক্তি এ স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পারবে না।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে মন্তব্য করে জামায়াতের নেতা বলেন, ‘অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’
সমাবেশে জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘বিশ্বের ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ ইসরায়েল এতে কর্ণপাত না করে এ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে।’

ফিলিস্তিন ও গাজাকে মুসলমানদের ইমান, বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে মানুষের এই সংগ্রাম চলমান রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফিলিস্তিনের পক্ষে জিহাদ করতে হবে। তাতে অংশ নিতে সবাই প্রস্তুত আছে।’
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ওপর যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, সেই সুযোগ ইসরায়েল পেয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তথাকথিত নেতৃবৃন্দের কারণে; যাঁরা মূলত ইসরায়েলের দালাল। তাঁরা যদি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বই করতেন, তাহলে ইসরায়েল বারবার গাজায় হামলা চালানোর সাহস পেত না।’
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘মুসলিম নেতাদের যদি আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানোর ভয় থাকে, তাহলে ওআইসির মাধ্যমে তাঁরা যেন সব মুসলিম রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করে জিহাদ ঘোষণা করেন। এটি করতে পারলে এক সপ্তাহে ইসরায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বিক্ষোভ–সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন। সমাবেশের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে একটি মিছিল বের করা হয়।