মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে মামা আলী হাওলাদারের নার্সারিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন রাজীব সরদার (২৫)। এ সময় তিনি পৌর শহরের হরিকুমারিয়া এলাকায় এলে পূর্বশত্রুতার জেরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পথে তিনি মারা যান।
এ ঘটনার তিন দিন পর রাজীবের মামা আলী হাওলাদার বাদী হয়ে জামাল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, আছাদ হাওলাদারসহ ৪৭ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক রাজীব হোসেন ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে আদালতে দীর্ঘ ১১ বছর বিচার কার্যক্রম চলার পর সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আদালতে এ রায় ঘোষণার সময় ২২ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন আবদুল হাই হাওলাদার (৫৫), আবদুল হক হাওলাদার (৫৮), জহিরুল হাওলাদার (৩৬), রাসেল হাওলাদার (৩৮), রাজা হাওলাদার (৫০), কালু হাওলাদার (৫৫), সোবহান হাওলাদার (৫০), তুষার শরীফ (৩০), ইউসুফ হাওলাদার (৪০), আজিজুল হাওলাদার (৪৮), রহিম হাওলাদার (৫২), রেজাউল হাওলাদার (৫৪), শামীম হাওলাদার (৩০), আহাদ হাওলাদার (২৯), দলিলউদ্দিন হাওলাদার (৫২), অলিল উদ্দিন হাওলাদার (৫৫), জসিম হাওলাদার (৩৮), মনির হাওলাদার (৩৭), সুমন শরীফ (৩২), সাগর শরীফ (৩০,) হাফিজুল কাজী (৩৮), কালু কাজী (৪২) ও আলাউদ্দিন কাজী (৩০)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন সেকেন হাওলাদার (৫০), উজ্জ্বল হাওলাদার (৪২), জামাল হাওলাদার (৪৮), রুবেল হাওলাদার (৩২), নুরুল আমিন হাওলাদার (৫৩) ও বাকি বিল্লা হাওলাদার (৫৮)। মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ২৯ আসামির বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজীবের মামা ও মামলার বাদী আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘১১ বছর পরে আজ আমাদের খুশির দিন। আমার ভাগনেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের ২৩ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। এই রায়ে আমরা খুশি। তবে এই রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে, এটা শুধু আমাদের চাওয়া।’
মাদারীপুর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, ‘মামার সঙ্গে বিরোধের জেরে তাঁর ভাগনেকে প্রতিপক্ষ নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আদালতের বিচারক ২৩ জনকে ফাঁসি ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আদালতে আরও একবার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।’