রাশিয়ার পুতিনকে চ্যালেঞ্জ করা ভাগনারের অর্থের উৎস কী

0
111
ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন

সপ্তাহান্তে রাশিয়ায় বড় ধরনের সংকটের পরও বিশ্ববাজার তুলনামূলকভাবে বেশ শান্ত। সশস্ত্র বিদ্রোহের পর ভাগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির (পিএমসি) প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নয়, বরং প্রতিবাদ জানাতে মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেছিল তাঁর বাহিনী। সেই যাত্রা থেমেছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইয়েভগেনি প্রিগোশিন উভয়েই মুখ বন্ধ রেখেছেন।

তবে নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভ্লাদিমির পুতিন বিদ্রোহীদের ছাড় দেবেন না। সেই সঙ্গে ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের ডানাও ছেঁটে দেবেন পুতিন।

এখন দেখা যাক, এ ঘটনায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ল। আপাতত এই অস্থিতিশীলতায় রুশ মুদ্রা রুবলের দরপতন হয়েছে। আগামী কয়েক মাস বৈশ্বিক পণ্য বাজারে এর প্রভাব অনুভূত হবে। ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আজ মঙ্গলবার সকালে বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দামও বাড়তি।

আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের বৈশ্বিক পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান হেলিমা ক্রফট বলেন, ‘রাশিয়ায় গৃহদাহ চলছে, বাজার বিশ্লেষণে তার প্রভাব এখনই আমাদের আমলে নিতে হবে।’ পণ্যের দাম আবারও বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আরও বিপাকে পড়বে।

প্রিগোশিন ও ভাগনার

ইয়েভগেনি প্রিগোশিন একসময় ভ্লাদিমির পুতিনের খাদ্য সরবরাহকারী ছিলেন। সেখান থেকে তিনি এখন রাশিয়ার এক ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান। অর্থবিত্তও তাঁর নিতান্ত কম নয়। প্রিগোশিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের রাশ টানতে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর ধরেই নানা চেষ্টাচরিত্র করে আসছে।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ভাগনার গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল অনেক দেশে বিভিন্ন বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, এমনকি তাদের হয়ে যুদ্ধেও লড়ে। সামরিক অভিযান দিগ্ভ্রান্ত হলে ভ্লাদিমির পুতিন এই ভাগনার গোষ্ঠীর শরণাপন্ন হন, যেমন সিরিয়া ও ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ঘটেছে।

এ ছাড়া ইন্টারনেটে ট্রল করার জন্য ভাগনারের ফার্ম আছে, যাদের লক্ষ্য হচ্ছে পশ্চিমা গণতন্ত্র ও নির্বাচন, যেমন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভাগনারের নির্বাচনী গোষ্ঠীর প্রভাব ছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে রুশ সরকারকে সহায়তা করে ভাগনার, যার বিনিময়ে তারা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়।

অর্থ আসে কোথা থেকে

যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের মতে, ভাগনার গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক অপরাধী বাহিনী, এরা নির্মম। প্রিগোশিনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এভরো পোলিস সিরিয়া যুদ্ধে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে জ্বালানি ব্যবসায় নানা ধরনের ছাড় পেয়েছে। সুদান ও মধ্য আফ্রিকায় খনি পরিচালনায়ও অংশ নিয়েছে ভাগনার গোষ্ঠী। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কার্যক্রমের অর্থায়ন করেছে।

ভাগনার গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নানা ধরনের চাতুরীর আশ্রয় নেয়। যেমন তারা নগদ অর্থের বদলে সোনা, হীরা ও তেল-গ্যাস বিক্রির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার হিসাব অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবসা থেকে ভাগনার গোষ্ঠী ২৫ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে।

এ ছাড়া পশ্চিমা কর্তৃত্ব এড়াতে করপোরেট আইনজীবীদের সাহায্য নেন প্রিগোশিন। এ ছাড়া মার্কিন রাজস্ব বিভাগ রাশিয়ার আরও দুটি ফার্মের সন্ধান পেয়েছে, যারা ইউক্রেন যুদ্ধে ভাগনারকে সহায়তা করছে—টেরা টেক ও এও বার্ল। সেই সঙ্গে আছে চীনের স্পেসটি, যারা ভাগনার গোষ্ঠীকে স্যাটেলাইট চিত্র দিয়ে সহায়তা করে।

ভাগনার গোষ্ঠীর বিদ্রোহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রশ্ন হলো, এখন তিনি কী করবেন?

রাশিয়ায় একসময় বিনিয়োগ করেছিলেন বিল ব্রাউডার নামের এক বিনিয়োগকারী। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, পুতিন যেকোনো মূল্যে নিজের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন। আর কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে বড় ধরনের অভিযান চালাবেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.